hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৪৩৮
অধ্যায়- ৫ : রাসূলগণের সাথে তাদের জাতির ব্যবহার
সকল রাসূলকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে :

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا

অবশ্যই তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। (সূরা আন‘আম– ৩৪)

প্রত্যেক নবীরই শত্রু ছিল :

وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا

এভাবে আমি মানুষ ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। (সূরা আন‘আম– ১১২)

وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَ

এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদেরকে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা ফুরক্বানু ৩১)

প্রত্যেক নবীর সাথেই বিদ্রূপ করা হয়েছে :

وَكَمْ اَرْسَلْنَا مِنْ نَّبِيٍّ فِى الْاَوَّلِيْنَ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ نَّبِيٍّ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ

পূর্ববর্তীদের নিকট আমি অনেক নবী প্রেরণ করেছিলাম। তাদের নিকট এমন কোন নবী আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা যুখরুফু ৬, ৭)

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْاَوَّلِيْنَ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ

তোমার পূর্বে আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত না। (সূরা হিজর– ১০, ১১)

وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَمْلَيْتُ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثُمَّ اَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ

তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আমি কিছুকালের জন্য অবকাশ দিয়েছিলাম এবং আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলাম, কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা রা‘দু ৩২)

يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ

আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীনু ৩০)

জাতির লোকেরা রাসূলদের কথা মানতে অস্বীকার করত :

اَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَاُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوْحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوْدَؕ وَالَّذِيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْؕ لَا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا اللهُؕ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوْاۤ اَيْدِيَهُمْ فِۤيْ اَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوْاۤ اِنَّا كَفَرْنَا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ وَاِنَّا لَفِيْ شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَنَاۤ اِلَيْهِ مُرِيْبٍ

তোমাদের নিকট কি পূর্ববর্তীদের সংবাদ আসেনি, নূহ, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তী সম্প্রদায়ের? তাদের বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিল, তারা তাদের নিজের হাত তাদের মুখে রাখত (নবীদেরকে কথা বলতে বাধা দিত) এবং বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ অবশ্যই আমরা তা অস্বীকার করি এবং তোমরা যে বিষয়ে আমাদেরকে আহবান করছ, নিশ্চয় আমরা সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছি। (সূরা ইবরাহীম– ৯)

ধনীরাই আগে অস্বীকার করেছে :

وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ

যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি। (সূরা সাবা– ৩৪)

তারা নবীদের মিশনকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছে :

وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا

আমি রাসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবেই পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্ক করেছে, যাতে করে তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যে বিষয়ে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) সতর্ক করা হয়েছিল, তাকে বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করে নিয়েছে। (সূরা কাহফু ৫৬)

জাতির লোকেরা নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে :

كُلَّ مَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ

যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।

(সূরা মু’মিনূনু ৪৪)

নবীদের বিরোধিতায় সকল যুগে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে :

كَذٰلِكَ مَاۤ اَتَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا قَالُوْا سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ اَتَوَاصَوْا بِهٖۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُوْنَ

এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে, তারা বলেছে- তুমি তো এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এ উপদেশই দিয়ে এসেছে? বস্তুত তারা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত- ৫২, ৫৩)

ব্যাখ্যা : হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি যুগে বিভিন্ন দেশ ও জাতির লোকেরা নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মুকাবিলায় একই আচরণ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে একই রকমের কথা বলার কারণ এ নয় যে, একটি সম্মেলন করে আগের ও পরের সমস্ত মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখনই কোন নবী এসে দাওয়াত পেশ করবে তখনই তাঁকে এ জবাব দিতে হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, তাহলে তাদের আচরণের এ সাদৃশ্য এবং একই প্রকৃতির জবাবের ক্রমাগত পৃনরাবৃত্তি কেন? এর একমাত্র জবাব এই যে, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া এ আচরণের আর কোন কারণ নেই। প্রত্যেক যুগের অজ্ঞ লোকেরাই যেহেতু আল্লাহর দাসত্ব ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে পৃথিবীতে লাগামহীন পশুর মতো জীবন যাপন করতে আগ্রহী। তাই যিনিই তাদেরকে আল্লাহর দাসত্ব ও আল্লাহভীতিমূলক জীবন যাপনের আহবান জানিয়েছেন তাঁকেই তারা একই জবাব দিয়েছে। এ আয়াত থেকে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উপর আলোকপাত করা যায়। সেটি হচ্ছে, হেদায়াত ও গোমরাহী, নেক কাজ ও বদ কাজ, যুলুম ও ন্যায়বিচার এবং এ ধরনের আরো অনেক কাজকর্মের যেসব প্রবণতা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, উপায়-উপকরণের উন্নতির কারণে বাহ্যত তার রূপ-প্রকৃতি যত ভিন্ন হোক না কেন প্রত্যেক যুগে একইভাবে তার বহির্প্রকাশ ঘটে। আজকের মানুষ ট্যাংক, বিমান ও বোমার সাহায্যে যুদ্ধ করছে আর প্রাচীন যুগের মানুষ লাঠি ও পাথরের সাহায্যে লড়াই করেছে; কিন্তু যে মৌলিক কারণে মানুষে মানুষে লড়াই বাধে, তাতে চুল পরিমাণও পার্থক্য আসেনি।

তারা রাসূলদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে :

وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ

কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব, নতুবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর তাদের প্রতিপালক রাসূলদেরকে ওহী প্রেরণ করলেন- যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করব। (সূরা ইবরাহীম– ১৩)

জাতির লোকেরা রাসূলদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছে :

كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّالْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ۪ وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ

তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যাতে করে তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা মু’মিনু ৫)

অনেক নবীকে হত্যা করা হয়েছে :

اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ

নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়, তাদেরকেও হত্যা করেছে। তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরানু ২১)

وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ

তাদের উপর দারিদ্রের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। (সূরা আলে ইমরানু ১১২)

ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলরা তাদের নবীদের সাথে যেসব খারাপ আচরণ করেছিল, তা তাদের ইতিহাস গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বাইবেলের কয়েকটি ঘটনা এখানে উদ্ধৃত হলো।

(এক) সুলায়মান (আঃ) এর পর ইসরাঈলী সাম্রাজ্য জেরুজালেমের ইয়াহুদিয়া এবং সামারিয়ার ইয়াহুদিয়া এ দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অবশেষে ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্র নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দামেস্কের আরমী রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করে। এতে আল্লাহর হুকুমে হানানী নবী ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রের শাসক ‘আসা’-কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ‘আসা’ এই সতর্কবাণী গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর নবীকে কারারুদ্ধ করে। (২ বংশাবলি, ১৭ অধ্যায়, ৭-১০ শ্লোক)

(দুই) ইলয়াস (আঃ) যখন বা’ল দেবতার পূজার জন্য ইয়াহুদিদের তিরস্কার করেন এবং তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন, তখন সামারিয়ার ইসরাঈলী রাজা ‘আখিয়াব’ নিজের মুশরিক স্ত্রীর প্ররোচনায় নবীর প্রাণনাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে। ফলে নবীকে সিনাই উপদ্বীপের পর্বতাঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় ইলয়াস (আঃ) এভাবে দু‘আ করেন, ‘‘হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তলোয়ারের সাহায্যে তোমার নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। তাই তারা আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।’’ (১ রাজাবলি, ১৭ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক)

(তিন) সত্য ভাষণ দেয়ার অপরাধে ‘মিকাইয়াহ’ নামে একজন নবীকে ইসরাঈলী শাসক আখিয়াব কারারুদ্ধ করে। সে হুকুম দেয় যে, এ ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও।

(১ রাজাবলি, ২২ অধ্যায়, ২৬-২৭ শ্লোক)

(চার) যখন ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং যাকারিয়া (আঃ) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, তখন ইয়াহুদি রাজা ইউআসের নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলায়মানীতে ‘মাকদিস’ ও ‘যবেহ ক্ষেত্র’- এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়। (২ বংশাবলি, ২৪ অধ্যায়, ২১ শ্লোক)

(পাঁচ) যখন আশুরিয়াদের হাতে সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুজালেমের ইয়াহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন ‘ইয়ারমিয়াহ’ নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন। তিনি পথে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন, ‘‘সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো, অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চেয়েও ভয়াবহ হবে।’’ কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এ সতর্কবাণীর বিরূপ উত্তর আসে। চারদিক থেকে তাঁর উপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে। তাঁকে মারধর করা হয়, কারারুদ্ধ করা হয়। ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয়।

(যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক; ২০ অধ্যায়, ১-১৮ শ্লোক; ৩৬-৪০ অধ্যায়)

(ছয়) ‘আমুস’ নামক একজন নবী সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সামালোচনা করেন এবং এর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। তখন তাঁকে চুড়ান্ত পত্র দিয়ে বলে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো। (আমুস, ৭ অধ্যায়, ১০-১৩ শ্লোক)

(সাত) ইয়াহিয়া (আঃ) যখন ইয়াহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ এ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে। কর্তিত মস্তক একটি থালায় করে নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়। (মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-১৯ শ্লোক)

(আট) ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলিমসমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয়। কারণ তিনি তাদের পাপকাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন। তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন। এসব কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয়। রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদন্ড দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর একদিন যখন রোমান শাসক পীলাতীস ইয়াহুদিদের বলল, আজ ঈদের দিন। আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাববা ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই। আমি কাকে মুক্তি দেব? ইয়াহুদিরা সমস্বরে বলল, আপনি বারাববাকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন। (মথি, ২৭ অধ্যায়, ২০-২৬ শ্লোক)

এ হচ্ছে ইয়াহুদি জাতির অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কয়েকটি উদাহরণ। কুরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে জাতি নিজেদের ফাসিক ও দুশ্চরিত্র লোকদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে এবং সৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী লোকদেরকে কারাগারে স্থান দিতে চায়, আল্লাহ তাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ না করলে আর কাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবেন?

নবীরা মানুষ হওয়াতে লোকেরা ঈমান আনতে দ্বিধা করত :

وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا قُلْ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا

যখনই মানুষের নিকট (আল্লাহর কাছ থেকে) হেদায়াত এসেছে, তখনই তাদের ঈমান আনতে কোন জিনিস বাধা দেয়নি, তবে তারা শুধু এ কথাই বলেছে- আল্লাহ কি (আমাদের মতোই) একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন? (হে নবী!) তুমি বলে দাও, যদি এ পৃথিবীতে ফেরেশতাগণ বসবাস করত এবং তারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম।

(সূরা বনী ইসরাঈল– ৯৪, ৯৫)

নবীরা জাতির লোকদেরকে বুঝাতেন :

قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى

তাদের রাসূলগণ বলেছিল, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং তোমাদেরকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম– ১০)

قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ وَمَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نَّأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ

তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলত, আমরা তোমাদের মতোই মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আমরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন প্রমাণ উপস্থিত করতে সক্ষম নই। আর আল্লাহর উপরই মুমিনগণের নির্ভর করা উচিত। (সূরা ইবরাহীম– ১১)

লোকেরা নবীদের কথার পাল্টা জবাব দিত :

قَالُوْاۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاؕ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَصُدُّوْنَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا فَأْتُوْنَا بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ

তারা বলত, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদাত করত তোমরা তাদের ইবাদাত হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা ইবরাহীম– ১০)

নবীগণ ধৈর্যধারণ করতেন :

وَمَا لَنَاۤ اَ لَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا وَلَنَصْبِرَنَّ عَلٰى مَاۤ اٰذَيْتُمُوْنَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ

আমরা কেন আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্যধারণ করব। আর নির্ভরকারীদের উচিত, আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। (সূরা ইবরাহীম– ১২)

নবীদেরকে মিথ্যারোপ করায় তারা ধ্বংস হয়েছে :

ثُمَّ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرٰى كُلَّمَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَاَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ

অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে (পরবর্তীদের জন্য) কাহিনীর বিষয়বস্তু বানিয়ে দিয়েছি। সুতরাং ধ্বংস অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা মু’মিনূনু ৪৪)

কিয়ামতের দিন সকল নবী ও তাদের উম্মতকে প্রশ্ন করা হবে :

فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ

অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদেরকে তো আমি জিজ্ঞেস করবই এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করব। (সূরা আ‘রাফু ৬)

সকল রাসূলের কথা কুরআনে আলোচনা করা হয়নি :

وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ

অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বর্ণনা করেছি এবং আরো অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা তোমাকে বর্ণনা করিনি। (সূরা নিসা– ১৬৪)

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَّنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّنْ لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ

আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদের কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করেছি এবং কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করিনি। (সূরা মু’মিনু ৭৮)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন