hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩২৩
পর্ব- ৪০ : মানুষ অধ্যায়- ১ : মানুষ সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়
মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয় মাটি থেকে :

وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ

তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা (সকল) মানুষ বিস্তার লাভ করেছ। (সূরা রূম- ২০)

মাটির বিভিন্ন পর্যায় :

وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ

তিনি মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা সাজদা- ৭)

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ

তিনিই তোমাদেরকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আন‘আম- ২)

اِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِّنْ طِيْنٍ لَّازِبٍ

আমি তো তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আঠাযুক্ত কাদামাটি থেকে। (সূরা সাফফাত- ১১)

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ

আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে। (সূরা হিজর- ২৬)

خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ

তিনি মানুষকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন পোড়ামাটির মতো শুকনা মাটি হতে। (সূরা আর রহমান- ১৪)

ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদে মানুষ সৃষ্টির যে প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বিভিন্ন আয়াতের বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো: ১. তুরাব অর্থাৎ মাটি। ২. ত্বীন অর্থাৎ পঁচা কর্দম, যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। ৩. ত্বীন লাযেব বা আঠালো কাদামাটি। অর্থাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্টি হয়ে যায়। ৪. حَمَاءٌ مَّسْنُوْنَ অর্থাৎ যে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ৫. صَلْصَالٌ مِّنْ حَمَاءٍ مَّسْنُوْنَ كَالْفَخَّارِ অর্থাৎ পঁচা কাদা, যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মতো হয়ে যায়। ৬. بَشَرٌ (বাশার) মাটির এ শেষ পর্যায় থেকে আদম (আঃ) কে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা যার মধ্যে তাঁর বিশেষ রূহ ফুৎকার করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যার প্রতি সিজদা করিয়েছেন এবং যার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছিলেন। ৭. مَاءٌ مَّهِيْنٌ পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মতো সংমিশ্রিত দেহনির্যাস থেকে তার বংশধারা চালু করা হয়েছে। এ কথাটি বুঝাতে অন্যস্থানে نُطْفَةٌ (অর্থাৎ শুক্র) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রথম মানুষ থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করা হয় :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا

তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)

خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا

তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি থেকে। তারপর তা থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। (সূরা যুমার- ৬)

পরবর্তীতে মানুষ সৃষ্টির উপাদান বীর্যে পরিণত করা হয় :

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ

আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। (সূরা মু’মিনূন- ১২, ১৩)

قُتِلَ الْاِنْسَانُ مَاۤ اَكْفَرَهٗ مِنْ اَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ مِنْ نُّطْفَةٍؕ خَلَقَهٗ فَقَدَّرَهٗ

মানুষ ধ্বংস হোক! সে কতই না অকৃতজ্ঞ! তাকে তিনি কোন বস্তু হতে সৃষ্টি করেছেন? তিনি তাকে শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার তাকদীর (ভাগ্য) নির্ধারণ করে দেন। (সূরা আবাসা, ১৭-১৯)

নারী-পুরুষ উভয়ের থেকে এ বীর্য বের হয় :

فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ

সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কী হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারিক, ৫-৭)

বীর্যকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের গর্ভে রাখা হয় :

اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ

আমি কি তোমাদেরকে নগণ্য পানি হতে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! (সূরা মুরসালাত, ২০-২৩)

বীর্যকে ক্রমে রক্ত, গোশত ও হাড্ডিতে পরিণত করা হয় :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَاِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْؕ وَنُقِرُّ فِى الْاَرْحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ

হে মানুষ! যদি তোমরা উত্থান সম্বন্ধে সন্দিহান হও তবে জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে, তারপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট অবস্থায়। যাতে করে আমি (আমার শক্তি ও ক্ষমতা) তোমাদের নিকট স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারি। অতঃপর আমি যাকে ইচ্ছা তাকে এক নির্দিষ্টকালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থির রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি। অতঃপর (লালন-পালন করি) যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। (সূরা হজ্জ- ৫)

ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًاۗ ثُمَّ اَنْشَاْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَؕ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাটবাঁধা রক্তে, অতঃপর জমাটবাঁধা রক্তকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করে দেই মাংস দ্বারা; অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব বরকতময় আল্লাহই সর্বোত্তম স্রষ্টা! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)

অতঃপর এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয় :

وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ خَالِقٌ ۢبَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ فَاِذَا سَوَّيْتُهٗ وَنَفَخْتُ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِيْ فَقَعُوْا لَهٗ سَاجِدِيْنَ

যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কাঁদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি। অতএব যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হও। (সূরা হিজর- ২৮, ২৯)

ব্যাখ্যা : অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট থেকে মানুষের মতো বিস্ময়কর সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করা, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু করবে এবং যতটুকু নিয়ামতপ্রাপ্ত হবে সবকিছু সেখানেই নির্ধারিত হওয়া, কারো গর্ভপাতের শিকার হওয়া, কারো শিশুকালেই মরে যাওয়া, কারো যৌবনকালে বা বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছা- এসব বিষয় এ সত্যটিই তুলে ধরছে যে, এক সর্বশক্তিমান সত্তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তাই একমাত্র তাঁরই আইনকানুন ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে।

তিনটি পর্দার ভেতরে সযত্নে এ কাজ সম্পন্ন হয় :

يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّنْ ۢبَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ

তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে একের পর এক তিন স্তরের অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক, সকল কর্তৃত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে? (সূরা যুমার- ৬)

তারপর মানবশিশুকে দুনিয়াতে বের করে আনা হয় :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে; তারপর শুক্রবিন্দু হতে; তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে; তারপর বের করে আনেন শিশুরূপে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)

এরপর যৌবনে পদার্পণ করে :

ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُوْنُوْا شُيُوْخًا

অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হতে পার যৌবনে, তারপর উপনীত হতে পার বার্ধক্যে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)

ধীরে ধীরে মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি লাভ করে :

وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে বের করেছেন এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা নাহল- ৭৮)

কেউ শিশুকালে মারা যায় :

وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوْاۤ اَجَلًا مُّسَمًّى وَّلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ

তোমাদের মধ্যে কারো (যৌবনে পদার্পণ করার) পূর্বেই মৃত্যু ঘটে, যাতে তোমরা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত পৌঁছে যাও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা মু’মিন- ৬৭)

কেউ আবার বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে :

وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرَدُّ اِلٰۤى اَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ ۢبَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا

তোমাদের মধ্যে কাউকে উপনীত করা হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই থাকে না। (সূরা হজ্জ- ৫)

ব্যাখ্যা : শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য এসব অবস্থা আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান শক্তিশালী করেন, যাকে চান শৈশবেই মৃত্যু দান করেন, যাকে চান যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান দীর্ঘজীবি করেও সুস্থ রাখেন, আবার যাকে চান তাকে বার্ধক্যের এমন কষ্টকর অবস্থায় পৌঁছে দেন, যার দ্বারা দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করতে পারে- এসব তাঁরই ইচ্ছা। মানুষ যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন, আল্লাহর শক্তির শৃংখলে সে এমনভাবে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায় রাখতে চান তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করিয়ে সে বিশেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যান, যা তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। বিশেষ করে সে মুহূর্তটি আসার পূর্বে যদি গোটা দুনিয়ার মানুষ মিলিত হয়েও তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে, তবুও কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। আবার সে মুহূর্তটি এসে যাওয়ার পর দুনিয়ার সমস্ত শক্তি মিলিত হয়েও যদি কাউকে জীবিত রাখার জন্য চেষ্টা করে, তবুও সফল হতে পারবে না। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার পর সমস্ত মানুষকে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে।

এভাবেই মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে :

وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءًۚ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا

অতঃপর তিনি তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তাকেও ভয় করো (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো), নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)

বিভিন্ন গোত্রে ও জাতিতে মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا

হে মানবসমাজ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন শাখা ও গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা একে অপরকে (ঐসব নামে) চিনতে পার। (সূরা হুজুরাত- ১৩)

মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে :

اَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّنْ مَّنِيِّ يُّمْنٰى ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوّٰى فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى

সে কি নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর তিনি তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। তারপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ৩৭-৩৯)

ব্যাখ্যা : নারী ও পুরুষের জুটি মানুষের জন্মের মূল উৎস। জীবজন্তুর বংশধারাও পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের মিলনের সাহায্যেই এগিয়ে চলছে। উদ্ভিদের মধ্যেও বিপরীত লিঙ্গের নীতি কার্যকর রয়েছে। এমনকি নিষ্প্রাণ জড় বস্তুর মধ্যেও দেখা যায় বিভিন্ন বস্তু যখন একটা অন্যটার সাথে মিলিত হয়, তখনই তাদের থেকে নানা প্রকার যৌগিক পদার্থ অস্তিত্ব লাভ করে। পদার্থের মৌলিক গঠন ঋণাত্মক ও ধনাত্মক বৈদ্যুতিক শক্তির সংযোগেই সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ এসব জিনিস জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে এদের মধ্যে জুটি বেঁধে থাকেন।

আল্লাহ মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন :

لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ

আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি খুব সুন্দর অবয়বে। (সূরা ত্বীন- ৪)

وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ

তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন অতি সুন্দরতম অবয়বে, আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)

মাতৃগর্ভে ইচ্ছানুযায়ী মানুষের আকার তৈরি করেছেন :

هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ

তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)

মানুষের গঠনে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন :

اَلَّذِيْ خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ فِۤيْ اَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ

যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন, তারপর সুবিন্যস্ত করেছেন। আর তিনি তোমাকে যে আকৃতিতে চেয়েছেন সংযোজিত করেছেন। (সূরা ইনফিতার- ৭, ৮)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন