hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৫
অধ্যায়- ১০ : আল্লাহ নিয়ামতদাতা
সকল নিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে :

وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ

তোমাদের নিকট যে সমসত্ম নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই (আসে); আবার যখন তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। (সূরা নাহল- ৫৩)

আল্লাহর নিয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না :

وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا

তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১৮)

وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ

আর যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)

মানুষের প্রয়োজনীয় সবই তিনি দিয়েছেন :

وَاٰتَاكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ

আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)

মানুষের জন্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন :

اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً

তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহই তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু জমিনে (সবকিছুকে) এবং তিনিই তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)

ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব নিয়ামত অনুভব করে, সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর তারা যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জানে না এবং অনুভবও করে না, সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের শরীরে ও বাইরে এমন অগণিত জিনিস রয়েছে, যা দুনিয়ায় তার জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ অনুভবও করে না যে, স্রষ্টা তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার দ্বারা তাদের জীবিকা দান করেন, তার বিকাশ ঘটান এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করেন। মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন, তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি কোন কোন দিক থেকে কোন ধরনের কী পরিমাণ উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে। যেমন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা, খাদ্যোপকরণের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা ইত্যাদি। মোটকথা তিনি মানবজাতির ছোট-বড় সবধরনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অসংখ্য উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের উপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণভাবে প্রদান করেছেন।

আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :

وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ

আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)

তিনি আকাশকে আটকিয়ে রাখেন :

وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ

আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)

চন্দ্র ও সূর্যকে বানিয়েছেন সময় গণনার মাধ্যম :

فَالِقُ الْاِصْبَاحِۚ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ

তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত নিয়ম। (সূরা আন‘আম- ৯৬)

পৃথিবীকে বানিয়েছেন বিছানাস্বরূপ :

اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ مَهْدًا

যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। (সূরা যুখরুফ- ১০)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা এখানে পৃথিবীকে দোলনার সাথে এবং অন্য আয়াতে বিছানার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে, মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে আল্লাহ তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে এমন আগুন, যা পাথরকেও গলিয়ে দেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্রষ্টা তাকে এতটা শান্ত বানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ এর উপর বসবাস করে কিন্তু অনুভব পর্যন্ত করতে পারে না যে, এটি মহাশূন্যে ঝুলন্ত গ্রহ। মানুষ এর পিঠের উপর নিরাপদে চলাফেরা করছে অথচ তাদের এ ধারণাও নেই যে, বন্দুকের গুলীর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়িতে তারা অবস্থান করছে। বিনা দ্বিধায় তাকে খনন করছে এবং তার পেট থেকে রিযিক বের করছে; অথচ কখনো কখনো ভূমিকম্পের অতি সাধারণ কম্পনও জানিয়ে দেয় যে, এটা কত ভয়ঙ্কর স্থান।

মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন :

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ

তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। আর আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ৯৮)

পৃথিবীকে স্থির রাখতে পাহাড় স্থাপন করেছেন :

وَجَعَلْنَا فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ

আর আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশসত্ম পথ, যাতে তারা গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (সূরা আম্বিয়া- ৩১)

পৃথিবীতে রাস্তা তৈরি করেছেন :

وَاَلْقٰى فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ

আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। আর এতে স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পার। (সূরা নাহল- ১৫)

وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ بِسَاطًا - لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا

আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)

وَجَعَلَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ

তিনি পৃথিবীতে তোমাদের জন্য চলার পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১০)

ব্যাখ্যা : পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমির অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক পথ, যা আল্লাহ তৈরি করেছেন। এসব পথ ধরেই মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্বত শ্রেণিকে যদি কোন ফাঁক ছাড়া প্রাচীরের মতো করে দাঁড় করানো হতো এবং ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোন সমুদ্র, নদী-নালা না থাকত তাহলে মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল সেখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ত। আল্লাহ আরো অনুগ্রহ করেছেন এই যে, তিনি গোটা ভূপৃষ্ঠকে একই রকম করে সৃষ্টি করেননি, বরং তাতে নানা ধরনের এমনসব পার্থক্যসূচক চিহ্ন রেখে দিয়েছেন, যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন এলাকা চিনতে পারে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার সাহায্যে পৃথিবীতে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। মানুষ যখন বিশাল কোন মরুভূমিতে যায়, যেখানে মাইলের পর মাইল কোন পার্থক্যসূচক চিহ্ন থাকে না এবং সে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে এই নিয়ামতের মর্যাদা বুঝতে পারে। এসব প্রাকৃতিক রাস্তা ও রাস্তার চিহ্নসমূহের সাহায্যে তোমরা তোমাদের পথ চিনে নিতে পার এবং যেখানে যেতে চাও সেখানে যেতে পার। বহু সংখ্যক স্রষ্টা মিলে এ ব্যবস্থা করেনি, বরং এক মহাজ্ঞানী পালনকর্তা আছেন, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাহাড় ও সমতল ভূমিতে এসব রাস্তা বানিয়েছেন এবং পৃথিবীর একেকটি অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন, যার সাহায্যে মানুষ এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে চিনতে পারে।

জমিনে মানুষের চলাফেরা করার ব্যবস্থা করেছেন :

هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ

তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো, (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)

هُوَ الَّذِيْ يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ

তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস- ২২)

পথ চেনার জন্য চিহ্ন ও তারকা বানিয়েছেন :

وَعَلَامَاتٍ ؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ

আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) পথ নির্ণায়ক চিহুসমূহও। (তাছাড়া) তারা (মানুষ) নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশনা পায়। (সূরা নাহল- ১৬)

সর্বত্র মানুষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন :

هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَ رْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ

তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।

(সূরা মুলক- ২৪)

মানুষের সফরের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করেছেন :

وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

তিনি তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)

وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ - لِتَسْتَوُوْا عَلٰى ظُهُوْرِهٖ ثُمَّ تَذْكُرُوْا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ اِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُوْلُوْا سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ

যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, তিনি পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১২, ১৩)

মানুষের ঘরবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন :

وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ ۢبُيُوْتِكُمْ سَكَنًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ

আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা এটাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)

পোশাক দিয়েছেন :

وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَاْسَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُوْنَ

তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, সেটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বর্মের, সেটা তোমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। (সূরা নাহল- ৮১)

পাহাড়েও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন :

وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا

আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)

মানুষকে বিভিন্নভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :

نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ

আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যেন একে অপরের দ্বারা খেদমত করিয়ে নিতে পারে। (জেনে রেখো) তারা যা জমা করে তোমার প্রতিপালকের রহমত তা হতে অনেক উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ- ৩২)

ব্যাখ্যা : একজনকেই সবকিছু অথবা সবাইকে সবকিছু না দেয়া আল্লাহর চিরস্থায়ী একটি নিয়ম। সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই এ পার্থক্য নজরে পড়বে। আল্লাহ কাউকে কোন জিনিস দিয়ে থাকলে আরেকটি জিনিস থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন এবং সেটি অন্য কাউকে দিয়েছেন। এমনটি করার কারণ হলো, কোন মানুষই যেন অন্য মানুষদের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত না হয়। আল্লাহ একজনের মধ্যেই জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং অন্যসব পূর্ণতার সমাবেশ ঘটাননি এবং কাউকে সবকিছু থেকে বঞ্চিতও করেননি। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার যে সাধারণ উপায়-উপকরণ আছে তার বণ্টনব্যবস্থাও আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন, অন্য কারো হাতে তুলে দেননি। আল্লাহ কাউকে সুশ্রী, কাউকে কুশ্রী, কাউকে শক্তিশালী এবং কাউকে দুর্বল, কাউকে মেধাবী এবং কাউকে মেধাহীন, কাউকে সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, কাউকে বিকলাঙ্গ, অন্ধ অথবা বোবা, কাউকে আমীরের পুত্র এবং কাউকে গরীবের পুত্র, কাউকে উন্নতজাতির সদস্য এবং কাউকে পরাধীন হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। জন্মগত এই ভাগ্যের ব্যাপারে কেউ সামান্যতম কর্তৃত্বও খাটাতে পারে না। আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন সে তা-ই হতে বাধ্য; কারো তাকদীরের উপর জন্মগত অবস্থার যে প্রভাবই পড়ে তা পাল্টে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তাছাড়া আল্লাহই মানুষের মধ্যে রিযিক, ক্ষমতা, মর্যাদা, খ্যাতি, সম্পদ ও শাসন কর্তৃত্ব ইতাদি বণ্টন করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্মান লাভ করে কেউ তার মর্যাদাহানি করতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যার জন্য দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন এসে যায় কেউ তাকে পতন থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের মুকাবিলায় মানুষের সমস্ত চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজেই আসে না।

মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন :

وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ

আর পশুরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণামত্ম ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৭)

সমুদ্রে নৌকা চলার ব্যবস্থা করেছেন :

سَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖؕ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ

তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তাঁর নির্দেশে সেটা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং তিনি নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)

আল্লাহ রিযিক তালাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :

رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا

তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)

রাতে বিশ্রাম ও দিনে রিযিক তালাশের সুযোগ করে দিয়েছেন :

وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)

উত্তম রিযিক দান করেছেন :

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا

আমি তো আদম সমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)

আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :

اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ

যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে (আগুন) জ্বালাও। (সূরা ইয়াসীন- ৮০)

পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন :

اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَ رْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖ

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকেও (তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন)? (সূরা হজ্জ- ৬৫)

وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি রাত ও দিনকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)

اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ

তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)

وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবকিছু। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ১৩)

ব্যাখ্যা : কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিসকে তার অধীন করে দেয়া। ঐ জিনিসকে নিজের অধীনে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করা। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।

তিনি মানুষের জীবিকা উৎপন্ন করেন :

يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

তিনি তাদের জন্য তা দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)

اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا

তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও চারণভূমি। (সূরা নাযি‘আত- ৩১)

পশু পালনের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছেন :

وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ

আর যখন তোমরা তাদেরকে গোধূলি লগ্নে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। (সূরা নাহল- ৬)

চামড়ার উপকরণ ও গোশত দিয়েছেন :

وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ

তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)

পশুর পশমকেও উপকারী করেছেন :

وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ

তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)

মেঘ বহনকারী বাতাস প্রেরণ করেন :

وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذَالِكَ النُّشُوْرُ

আর তিনিই আল্লাহ যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করে দেই। ঠিক এভাবেই (একদিন মানুষেরও) পুনরুত্থান (হবে)। (সূরা ফাতির- ৯)

আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন :

وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলসমূহ উৎপাদন করেন। অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। (সূরা বাক্বারা- ২২)

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا

আর তিনি নিজ অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)

প্রাণীকুলের পিপাসা নিবারণ করেন :

لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا

যার দ্বারা আমি মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)

وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُۚ وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخَازِنِيْنَ

আমি বৃষ্টি বহনকারী বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি। অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই; তোমরা নিজেরা তো এর কোন ভান্ডার জমা করে রাখনি (যে, সেখান থেকে এসব আসছে)। (সূরা হিজর- ২২)

পানি দ্বারা ফসল উৎপাদন করেন :

فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ

অতঃপর আমি এর দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপাদন করি। তোমাদের জন্য এতে আছে প্রচুর ফল; আর তোমরা তা হতে আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)

পৃথিবীর পানিকে সংরক্ষণ করেন :

وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ

আর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিত হারে। অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি; আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যা দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতি বছর একইভাবে চলতে থাকে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে বর্ষণ করেন, যা ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী। এ ব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। একটি দেশের বৃষ্টিপাতের গড় পরিবর্তন কিংবা পৃথিবীর ব্যাপক এলাকায় তার বণ্টন হারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা কোন তুফানকে রোধ করা বা বৃষ্টিকে নিজ দেশে বর্ষণ করার জন্য বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই।

দুই সাগরের মধ্যখানে পর্দা সৃষ্টি করেছেন :

هُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا

তিনিই দু’টি দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও ক্ষার। আর উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অমত্মরায় ও অনতিক্রম্য ব্যবধান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)

ব্যাখ্যা : যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলার একক ইলাহ্ ও একক রব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এসব শব্দাবলির অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানবসমাজের সমুদ্র যতই লোনা হয়ে থাক না কেন, আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সৎকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন। ফলে তাগুতের লোনা পানির তরঙ্গ যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ

তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)

সমুদ্রে মাছ ও অলঙ্কার দিয়েছেন :

هُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

তিনিই সমুদ্রকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করতে পার এবং তা হতে গহনা আহরণ করতে পার, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। আর তোমরা দেখতে পাও যে, এর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)

وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌؕ وَّمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়- একটি মিঠা পানিবিশিষ্ট, যা পিপাসা দূর করে এবং এর পানি পান করা সহজ। আর অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত (মাছ) ভক্ষণ কর এবং মণি-মুক্তার অলঙ্কার আহরণ কর, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ফাতির- ১২)

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। (সূরা আর রহমান- ২২)

তিনি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে ফসলের উপযোগী করেন :

اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَتُصْبِحُ الْاَ رْضُ مُخْضَرَّةً ؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যেন পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও পরিজ্ঞাত। (সূরা হজ্জ- ৬৩)

ব্যাখ্যা : لَطِيْفٌ (লাত্বিফ) শব্দের দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ, মায়া ও বদান্যতাপ্রবণ। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে তার এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন, যেখানে কারো দৃষ্টি যায় না। সে প্রয়োজনগুলো তিনি এমনভাবে পূরণ করেন যে, বান্দা নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না, কে কখন তার কোন্ প্রয়োজন পূরণ করছে।

وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ

তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। (জেনে রেখো) এভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে (কবর থেকে) বের করে আনব, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)

তেল উৎপাদনের জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন :

وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ

(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন। (সূরা মু’মিনূন- ২০)

বীজ থেকে গাছ বের করেন :

اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰىؕ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّؕ ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ

আল্লাহই শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে বের করেন। তিনিই তো আল্লাহ, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে? (সূরা আন‘আম- ৯৫)

বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট ফল ও বাগান বানিয়েছেন :ٰ

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ - وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ

তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ, খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। সুতরাং যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল ভক্ষণ করো এবং ফসল তুলার দিন তার হক (ওশর) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)

সবকিছুই পরিমাণ মতো উৎপাদন করেন :

وَالْاَ رْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُوْنٍ

আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উৎপাদন করেছি সুপরিমিতভাবে। (সূরা হিজর- ১৯)

ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহর কুদরত, শক্তি ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি তার একটিমাত্র চারাকে দুনিয়ায় বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে শুধু তারই চারা দেখা যাবে, অন্য কোন উদ্ভিদের জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী ও অসীম শক্তিধরের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ এ বিশ্বচরাচরে উৎপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রজাতির উৎপাদন একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ার পর থেমে যায়। এ প্রক্রিয়ার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের আয়তন, বিস্তৃতি, উচ্চতা ও বিকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোন উদ্ভিদ এ সীমা অতিক্রম করতে পারে না। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ প্রতিটি বৃক্ষ, এর চারা ও লতাপাতার জন্য উচ্চতা, আকৃতি, ফুল, ফল ও উৎপাদনের একটি পরিমাণ হিসাব করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ পরিমাণের মধ্যে কমবেশি করেন না :

وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ

আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)

ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। একমাত্র আল্লাহর নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।

সকল প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করেন :

وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَهٗ بِرَازِقِيْنَ

আর তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও, তাদের জন্যও। (সূরা হিজর- ২০)

প্রতিটি জিনিসকে পথনির্দেশ করেছেন :

رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى

আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ৫০)

মানুষকে কান, চোখ ও বোধশক্তি দিয়েছেন :

وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ৭৮)

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ

তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অমত্মর সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)

قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ

বলো, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। তোমরা তো খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মুলক- ২৩)

স্ত্রী ও সন্তান দান করেছেন :

وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَنِيْنَ وَحَفَدَةً وَّرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ اَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُوْنَ وَبِنِعْمَةِ اللهِ هُمْ يَكْفُرُوْنَ

আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল- ৭২)

মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :

اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ

যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)

কথা বলা শিখিয়েছেন :

خَلَقَ الْاِنْسَانَ - عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)

আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন :

اَلرَّحْمٰنُ -‐ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ

পরম দয়াময় আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)

ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে ‘রহমান’ শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন, যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতা নির্ভরশীল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন