hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩২৯
পর্ব- ৪১ : মানুষের কার্যক্রম অধ্যায়- ১ : মানুষের প্রকারভেদ ও তাদের কার্যাবলি
মানুষকে সৎ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে :

فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُۗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ

অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতিকে এ প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা, রব অথবা উপাস্য নেই। সুতরাং তোমাদেরকে এ প্রকৃতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যদি স্বেচ্ছাচারী হয়ে চলার নীতি অবলম্বন কর, তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। আর যদি অন্যের আনুগত্যের শিকল নিজের গলায় পরে নাও, তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরোধী হিসেবে গণ্য হবে। এ বিষয়বস্তুটিই নবী ﷺ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রতিটি শিশু মানবিক প্রকৃতির উপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার মা-বাবাই তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তুলে। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহেলী কুসংস্কারের কারণে তার কান কেটে দেয়।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯২৬)

প্রথমে সকল মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, পরে বিভেদ সৃষ্টি হয় :

كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَبَعَثَ اللهُ النَّبِيِّيْنَ مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ۪ وَاَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيْمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ

মানবজাতি ছিল একই সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর (যখন তারা মতভেদে লিপ্ত হয় তখন) আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে নবীদেরকে পাঠালেন। তাদের সাথে সত্য সহকারে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে করে লোকেরা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে মীমাংসা করে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)

একে অপরের উপর বাড়াবাড়িই ছিল এর প্রধান কারণ :

وَمَا اخْتَلَفَ فِيْهِ اِلَّا الَّذِيْنَ اُوْتُوْهُ مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْۚ فَهَدَى اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖؕ وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ

মূলত যাদেরকে কিতাব দান করা হয়েছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও তারা নিজেদের বাড়াবাড়ির কারণে তাকে (সে কিতাবকে) নিয়ে মতভেদ শুরু করে দিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ স্বেচ্ছায় ঈমানদারদেরকে মতভেদপূর্ণ বিষয় হতে সত্য পথের সন্ধান দিলেন। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে অসংখ্য মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব মতবিরোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন বংশ, গোত্র, জাতি ও পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর ভিত্তিতেই বিভিন্ন মতাদর্শের ধারকরা নিজেদের জন্য আলাদা ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতা তৈরি করে নিয়েছে। এক একটি মতাদর্শের সমর্থন ও পক্ষপাতিত্বে হাজার-হাজার, লাখো-লাখো লোক বিভিন্ন সময় ধন, প্রাণ, ইজ্জত-সম্মান সবকিছু কুরবানী করে দিয়েছে। আর এ মতাদর্শের সমর্থকদের মধ্যে অনেক সময় এমন মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে যে, তাদের একদল অন্য দলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং যারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল তারা এ অবস্থাতেও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করা থেকে বিরত থেকেছে। এ ধরনের মতবিরোধের ক্ষেত্রে বিবেকের দাবী এই যে, এক সময় না এক সময় সঠিক ও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হোক যে, যথার্থই তাদের মধ্যে হক কী ছিল এবং বাতিল কী ছিল, কে সত্যপন্থী ছিল এবং কে মিথ্যাপন্থী ছিল। মূলত এ দুনিয়ায় এ পর্দা সরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই; কেননা এটা হবে পরকালে।

তারা কে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা দেখতে চান :

وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلَا يَزَالُوْنَ مُخْتَلِفِيْنَ اِلَّا مَنْ رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ

তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমসত্ম মানুষকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তারা তো মতভেদ করতেই থাকবে, তবে তারা নয় যাদেরকে তোমার প্রতিপালক দয়া করেন; মূলত তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ১১৮, ১১৯)

ব্যাখ্যা : এখানে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কিত বাস্তব সত্যটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে পশু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষকেও একটি নির্দিষ্ট পথে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হবে- মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এটা কখনই চান না। যদি এটাই তাঁর ইচ্ছা হতো তাহলে ঈমানের দাওয়াত, নবী প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের প্রয়োজন ছিল না। সমস্ত মানুষ মুমিন ও মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি হতো, কুফরীর কোন সম্ভাবনাই থাকত না। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা হলো, তাকে নির্বাচন ও গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। তাকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পথে চলার ক্ষমতা দেয়া হবে। তার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের পথ খুলে দেয়া হবে। তারপর প্রতিটি মানুষকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি পথ বাছাই করে নিয়ে তার উপর চলার সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেকে নিজের প্রচেষ্টা ও উপার্জনের ফল হিসেবেই সবকিছু লাভ করবে। কাজেই যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা যখন নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং কুফরী ও ঈমানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তখন যে জাতি নিজে অসৎপথে এগিয়ে যেতে চায়, আল্লাহ তাকে জোর করে সৎপথে নিয়ে যাবেন না। আবার যে সৎপথে থাকতে চায়, তাকে জোর করে অসৎ পথে নিয়ে যাবেন না।

মানুষের মধ্যে কেউ মুমিন আবার কেউ কাফির :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে পরিণত হয়। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা তাগাবুন- ২)

আরেক দল আছে মুনাফিক :

اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَۗ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَلَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِيْلًا

নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; (মূলত এর মাধ্যমে) তিনিই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন তারা কেবল লোক দেখানোর জন্য শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়; আর তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে। এরা দোটানায় দোদুল্যমান- না এদের দিকে, না ওদের দিকে! আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ১৪২, ১৪৩)

আবার কেউ আছে মুশরিক :

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ

আর মানুষের মধ্যে এরূপ কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে শরীক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসার ন্যায় ভালোবেসে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)

মানুষের মৌলিক পরিচয় একটাই হয় :

مَا جَعَلَ اللهُ لِرَجُلٍ مِّنْ قَلْبَيْنِ فِيْ جَوْفِهٖ

আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বক্ষের মধ্যে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। (সূরা আহযাব- ৪)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ একজন লোক একই সাথে মুমিন ও মুনাফিক, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং সৎ ও অসৎ হতে পারে না। তার বক্ষদেশে দু’টি হৃদয় নেই যে, একটি হৃদয়ে থাকবে আন্তরিকতা এবং অন্যটিতে থাকবে আললাহর প্রতি বেপরোয়া ভাব। কাজেই একজন লোক এক সময় একটি মর্যাদারই অধিকারী হতে পারে। সে মুমিন হবে অথবা মুনাফিক হবে, কাফির হবে অথবা মুসলিম হবে। এখন যদি কেউ কোন মুমিনকে মুনাফিক বলে অথবা মুনাফিককে মুমিন বলে, তাহলে তাতে প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন হবে সে তেমন ফলাফল পাওয়ার উপযুক্ত হবে।

মুসলিমরা তিনভাগে বিভক্ত :

ثُمَّ اَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَاۚ فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖۚ وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌۚ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ ۢبِالْخَيْرَاتِ بِاِذْنِ اللهِؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ

অতঃপর আমি আমার বানদাদের মধ্য হতে যাদেরকে পছন্দ করেছি তাদেরকে এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী এবং কেউ কেউ আল্লাহর হুকুমে নেক কাজে অগ্রগামী। আর এটি আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বড় অনুগ্রহ। (সূরা ফাতির- ৩২)

ব্যাখ্যা : মুসলিমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত : (এক) নিজেদের প্রতি যুলুমকারী। এরা হচ্ছে এমনসব লোক, যারা আন্তরিকতা সহকারে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানে; কিন্তু কার্যত আল্লাহর কিতাব ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহের অনুসরণের হক আদায় করে না। এরা মুমিন কিন্তু গোনাহগার। অপরাধী কিন্তু বিদ্রোহী নয়। দুর্বল ঈমানদার, তবে মুনাফিক ও কাফির নয়। তাই এরাও কিতাবের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে শামিল। তিন শ্রেণির মধ্য থেকে এ শ্রেণির ঈমানদারদের কথা সবার আগে বলার কারণ হচ্ছে, উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। (দুই) মাঝামাঝি অবস্থানকারী। এরা হচ্ছে এমন লোক, যারা এ উত্তরাধিকারের হক কমবেশী আদায় করে, কিন্তু পুরোপুরি করে না। তারা আল্লাহর হুকুম পালন করে, আবার অমান্যও করে। নিজেদের প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি লাগামহীন করে ছেড়ে দেয়নি, বরং তাকে আল্লাহর অনুগত করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালায়; কিন্তু কখনো কখনো নিজেকে গোমরাহীর পথে ছেড়ে দেয় এবং গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এভাবে এদের জীবনে ভালো-মন্দ উভয় ধরনের কাজের সমাবেশ ঘটে। এরা সংখ্যায় প্রথম দলের চেয়ে কম এবং তৃতীয় দলের চেয়ে বেশি হয়। তাই এদেরকে দু’নম্বরে রাখা হয়েছে। (তিন) যারা ভালো কাজে অগ্রবর্তী। এরা কিতাবের উত্তরাধিকারের মধ্যে প্রথম সারির লোক। এরাই উত্তরাধিকারের হক পুরোপুরিভাবে আদায়কারী, কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের ক্ষেত্রেও অগ্রগামী। আল্লাহর পয়গাম তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় এবং সত্য দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ক্ষেত্রেও এরাই এগিয়ে থাকে। তাছাড়া সত্য, ন্যায়, ও কল্যাণের যে কোন কাজেও এরা অগ্রবর্তী থাকে। এরা জেনে বুঝে গোনাহ করে না। আর অজান্তে কোন গোনাহের কাজ অনুষ্ঠিত হলেও সে সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই এদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়। প্রথম দু’টি দলের তুলনায় উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যা কম। তাই এদের কথা সবার শেষে বলা হয়েছে, যদিও উত্তরাধিকারের হক আদায় করার ক্ষেত্রে এরাই অগ্রগামী।

ভালো কাজে অগ্রগামীরা আবার চার প্রকার :

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সূরা নিসা- ৬৯)

ব্যাখ্যা : صِدِّيْقٌ (সিদ্দিক) বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে পরম সত্যনিষ্ঠ ও সত্যবাদী। তার মধ্যে সততা ও সত্যপ্রিয়তা পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করে। নিজের আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদা সুস্পষ্ট ও সরল পথ অবলম্বন করে। সে সবসময় স্বচ্ছ মনে হক ও ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না। সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে, তার আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-শত্রু, আপন-পর কেউই তার কাছ থেকে নিখুঁত সত্যপ্রীতি, সত্যের সমর্থন ও সত্যের সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুরই আশঙ্কা করে না।

شَهِيْدٌ (শাহীদ) শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে সাক্ষী। শহীদ বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে নিজের জীবনের সমগ্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে তার ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। আল্লাহর পথে লড়াই করে প্রাণ উৎসর্গকারীকে এ কারণে শহীদ বলা হয় যে, সে প্রাণ উৎসর্গ করে এ কথা প্রমাণ করে দেয় যে, তার কাছে দ্বীন এত বেশি প্রিয় ছিল, যার জন্য নিজের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি।

صَالِحٌ (সালেহ) বা সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তার নিজের চিন্তাধারা, আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা, কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য ও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে।

কেউ ভালো কাজে জীবন দিয়ে দেয় :

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاةِ اللهِؕ وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ

মানুষের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের জীবন বিক্রয় করে দেয়। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)

আবার কেউ ভালো-মন্দ দু’টিই করে :

وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

কতক লোক এমন রয়েছে, যারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করে ফেলেছে। হয়তো আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০২)

প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করে :

قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شَاكِلَتِهٖؕ فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا

বলো, প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু তোমার প্রতিপালক সম্যক অবগত আছেন যে, চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৪)

ভালো-মন্দ যে যা করবে সে তারই ফলাফল ভোগ করবে :

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؗ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ

যে সৎ আমল করে সে তার (কল্যাণের) জন্যই করে এবং যে মন্দকর্ম করে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা জাসিয়া- ১৫)

اِنْ اَحْسَنْتُمْ اَحْسَنْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ وَاِنْ اَسَاْتُمْ فَلَهَا

যদি তোমরা সৎকর্ম কর, তবে সে সৎকর্মের ফলাফল তোমরা নিজেরাই ভোগ করবে। আর যদি তোমরা খারাপ কাজ কর, তবে তার পরিণামও তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭)

ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার লাভ করবে। একজনের কাজের পুরস্কার অন্যজন পাবে না। অনুরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যে দোষ করেছে সেজন্য তাকে পাকড়াও করা হবে। একজনের দোষের কারণে অন্যজনকে পাকড়াও করা হবে না। তবে এটা সম্ভব যে, কেউ কোন সৎকাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামায় এর সওয়াব লেখা হবে এবং কেউ কোন খারাপ কাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামাতেও তার গোনাহ লেখা হবে। আর এগুলো যদি কিয়ামত পর্যন্তও চলতে থাকে, তবুও তার ফল আমলনামায় লিখে যাওয়া হবে।

مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَّهٗ نَصِيْبٌ مِّنْهَاۚ وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا

কেউ কোন ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার (সওয়াবের) অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দকাজের সুপারিশ করলে তাতেও তার (পাপের) অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। (সূরা নিসা- ৮৫)

ব্যাখ্যা : এটা যার যেমন পছন্দ এবং যার যেমন ভাগ্য। কেউ আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা চালানোর এবং সত্যের শির উঁচু রাখার জন্য লোকদেরকেও উৎসাহিত করে- এর পুরস্কার সেও পায়। আবার কেউ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা এবং তাদেরকে আল্লাহর কালিমা উচুঁ করার সংগ্রাম থেকে বিরত রাখার জন্য নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করে- এর শাস্তিও সে পায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন