hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

২৬৪
অধ্যায়- ৭ : উদাহরণের মাধ্যমে শিরক খন্ডন
মুশরিকদের আকাঙ্ক্ষার উপমা মাকড়সার জালের সাথে :

مَثَلُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوْتِۚ اِتَّخَذَتْ بَيْتًاؕ وَاِنَّ اَوْهَنَ الْبُيُوْتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوْتِ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ

যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে নিজের জন্য ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়শার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত। (সূরা আনকাবূত- ৪১)

ব্যাখ্যা : মুশরিকদের আকীদা হলো, শরীকরা আমাদের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক। এদের পূজা করে এবং এদেরকে মান্নত ও নজরানা পেশ করে যখন আমরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করব তখন এরা আমাদেরকে সবধরনের বিপদাপদ থেকে বাঁচাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ মুশরিকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা বিশ্বের প্রকৃত মালিক ও শাসনকর্তাকে বাদ দিয়ে একেবারে অক্ষম ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের উপর নির্ভর করে যে আশার অট্টালিকা রচনা করেছ, তার প্রকৃত অবস্থা মাকড়শার জালের চেয়েও ভিত্তিহীন। মাকড়শার জাল যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও সহ্য করতে পারে না, তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকা এতই দুর্বল যে, যখন তোমরা পরকালের পথে পা রাখবে তখনই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব সত্যের সামান্যতম জ্ঞানও যদি তোমাদের থাকত, তাহলে তোমরা কখনো এসব ভিত্তিহীন কল্পনার উপর জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে না। সত্য এটাই যে, সারা বিশ্বের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সবকিছু একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভরশীল।

শরীকদের নিকট কিছু চাওয়ার উপমা :

لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَسْتَجِيْبُوْنَ لَهُمْ بِشَيْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ اِلَى الْمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهٖؕ وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ

সত্যের আহবান তাঁরই (আল্লাহরই); যারা তাঁকে ব্যতীত অপরকে আহবান করে, যারা তাদেরকে কোন সাড়া দেয় না তাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মতো, যে তার মুখে পানি পৌঁছাবে- এ আশায় তার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে পানির দিকে, অথচ সেটা তার মুখে পৌঁছানোর মতো নয়। আর কাফিরদের আহবান ভ্রষ্টতা (নিষ্ফল হওয়া) ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা রা‘দ- ১৪)

মুশরিকদের ভ্রষ্টতার এক চমৎকার উদাহরণ :

وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَكَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ اَوْ تَهْوِيْ بِهِ الرِّيْحُ فِي ْمَكَانٍ سَحِيْقٍ

যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে (তার উপমা হচ্ছে) সে যেন আকাশ হতে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জ- ৩১)

ব্যাখ্যা : এখানে আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থাকে। এ অবস্থায় তার মস্তিষ্ক এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ হিসেবে মেনে নেয় না এবং তার প্রকৃতি তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে চিনে না। মানুষ যদি নবী প্রদত্ত পথনির্দেশনা গ্রহণ করে তাহলে সে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির বলে নিজ প্রাকৃতিক অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং পরবর্তী পর্যায়ে সে নিচের দিকে নয় বরং উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু যখনই সে শিরক এবং নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করে, তখনই সে নিজের প্রকৃতির আকাশ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। তখন সে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার যে কোন একটির মুখোমুখী হয়।

একটি অবস্থা হচ্ছে, শয়তান ও বিপথে পরিচালনাকারী মানুষ- যাদেরকে শিকারী পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতঃপর তারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, তার নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারা- যাকে বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তা তাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কোন গভীর খাদে নিক্ষেপ করে। অত্র আয়াতে গভীর খাদকে سَحِيْقٌ (সাহীক্ব) বলা হয়েছে। কোন জায়গাকে এমন অবস্থায় সাহীক বলা হয়, যখন তা এতবেশি গভীর হয় যে, তার মধ্যে কোন জিনিস পড়ে গেলে তা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে চিন্তা-চেতনা ও নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনকে এমন গভীর খাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার মধ্যে পড়ে গিয়ে মানুষের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

উদাহরণের মাধ্যমে যুক্তি পেশ :

وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُوْا بِرَآدِّيْ رِزْقِهِمْ عَلٰى مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَآءٌؕ اَفَبِنِعْمَةِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ

আল্লাহ জীবনোপকরণের ক্ষেত্রে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আর যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে? (সূরা নাহল- ৭১)

ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوْكًا لَّا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّمَنْ رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَّجَهْرًاؕ هَلْ يَسْتَوُوْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ

আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোনকিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির, যাকে তিনি নিজের পক্ষ হতে উত্তম রিযিক দান করেছেন। অতঃপর সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য; অথচ তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা নাহল- ৭৫)

ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ اَنْفُسِكُمْؕ هَلْ لَّكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَآءَ فِيْ مَا رَزَقْنَاكُمْ فَاَنْتُمْ فِيْهِ سَوَآءٌ تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ اَنْفُسَكُمْؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ

আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার, যাতে করে তোমরা ও তারা সমপর্যায়ের হয়ে যাও? তোমরা তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ তোমরা নিজেদের লোকদেরকে ভয় কর। এভাবেই আমি বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা রূম- ২৮)

ব্যাখ্যা : যদিও মুশরিকরা মানুষের মধ্যে ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাহীনদের মধ্যে পার্থক্য অনুভব করে এবং এ পার্থক্য সামনে রেখেই প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা আচরণ করে, তবুও তারা এত মূর্খ ও অবুঝ সেজে আছে যে, তারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির পার্থক্যটুকুও বুঝতে পারে না। স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও শক্তি সবকিছুতেই তারা সৃষ্টিকে শরীক মনে করছে এবং সৃষ্টির সাথে এমন আচরণ করছে, যা একমাত্র স্রষ্টার সাথেই করা যেতে পারে। উপায়-উপকরণের উপর নির্ভরশীল এ জগতে কারো কাছে কোন জিনিস চাইতে হলে আমরা গৃহস্বামীর কাছেই চেয়ে থাকি; চাকর-বাকরদের কাছে চাই না। কিন্তু সমগ্র দয়ার উৎস যে সত্তা তাঁর কাছ থেকে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যখন সচেষ্ট হই, তখন তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর বান্দাদের কাছে হাত পাতি- এর চেয়ে বড় বোকামী আর কী হতে পারে?

وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ اَحَدُهُمَاۤ اَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّهُوَ كَلٌّ عَلٰى مَوْلَاهُ اَيْنَمَا يُوَجِّهْهُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍؕ هَلْ يَسْتَوِيْ هُوَ وَمَنْ يَّأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ

আল্লাহ আরো দু’জন ব্যক্তির উপমা দিচ্ছেন- তাদের একজন বোবা, যে কোনকিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার মনিবের বোঝা হয়ে থাকে। তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে ভালো কিছুই করে আসতে পারে না। সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে? (সূরা নাহল- ৭৬)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ এবং বানোয়াট মা‘বুদদের মধ্যে পার্থক্য কেবল এতটুকুই নয় যে, একজন ক্ষমতাধর মালিক এবং অন্যজন ক্ষমতাহীন গোলাম। বরং এ ছাড়াও তাদের মধ্যে এ পার্থক্যটিও রয়েছে যে, এ গোলাম তোমাদের আহবানও শোনে না, তার জবাবও দিতে পারে না এবং নিজের ক্ষমতাবলে কোন একটা কাজও করতে পারে না। তার নিজের সারাটি জীবন তার প্রভুর উপর নির্ভরশীল। প্রভু যদি তার উপর কোন কাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে সে কিছুই করতে পারে না। অন্যদিকে আল্লাহর অবস্থা হচ্ছে, তিনি কেবল বক্তাই নন বরং একজন জ্ঞানী সত্তা। তিনি দুনিয়াকে ইনসাফের হুকুম দেন। তিনি কেবল কাজ করার ক্ষমতাই রাখেন না বরং যা করেন তা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবেই করেন।

ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيْهِ شُرَكَآءُ مُتَشَاكِسُوْنَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍؕ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًاؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ

আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তির (দাসের) যার পরস্পর বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন কয়েকজন মালিক রয়েছে। আর অপর একজন ব্যক্তি (দাস) যার কেবল একজন মালিক রয়েছে। এদের উভয়ের অবস্থা কি সমান হতে পারে? সকল প্রশংসা আল্লাহর; বরং তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা যুমার- ২৯)

ব্যাখ্যা : এ উপমাতে আল্লাহ তা‘আলা শিরক ও তাওহীদের পার্থক্য এবং এ দু’টির প্রভাব পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি অনেক মনিবের অধীন এবং তারা প্রত্যেকেই তাকে নিজের দিকে টানে। অতঃপর তার সেবা গ্রহণ করতে চায় কিন্তু তাদের সকলের নির্দেশ শুনতে গিয়ে যার নির্দেশই সে পালন করতে অপারগ হয় সে তাকে ধমক দেয়, এমনকি শাস্তিও দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এক মনিবের চাকর সে অতি শান্তিতে জীবন-যাপন করে। তাকে অন্য কারো সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এটা এমন সহজসরল কথা যা বুঝার জন্য বেশি চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না যে, এক আল্লাহর দাসত্বে মানুষের জন্য যে শান্তি ও নিরাপত্তা আছে বহু সংখ্যক ইলাহের দাসত্ব করে কখনো তা লাভ করা যেতে পারে না।

এ উপমা সেসব জীবন্ত মনিবদের ক্ষেত্রেই খাটে, যারা কার্যতই পরস্পর বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে এবং নিজের দিকে টানতে থাকে। মানুষের নিজের প্রবৃত্তির মধ্যে এক মনিব বসে আছে। আরো অসংখ্য মনিব বিদ্যমান আছে ঘরের মধ্যে, বংশের মধ্যে, জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে, দেশ ও সমাজের মধ্যে, ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে, শাসক ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে, কাজকর্ম ও জীবিকার গন্ডির মধ্যে। তাদের পরস্পর বিরোধী আকাঙ্ক্ষা ও বিভিন্ন দাবী মানুষকে সবসময় পূরণ করতে হয়। অতঃপর সে যার দাবী পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, সে তাকে শাস্তি দেয়। তবে প্রত্যেকের শাস্তি ভিন্ন ভিন্ন। কেউ মনে আঘাত দেয়, কেউ উপহাস করে, কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করে। কেউ নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করে, কেউ ধর্মের উপর আক্রমণ করে এবং কেউ আইনের আশ্রয় নিয়ে শাস্তি দেয়। মানুষের জন্য এ থেকে বাঁচার একটিমাত্র উপায় হচ্ছে, তাওহীদের পথ গ্রহণ করে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাওয়া এবং অন্যদের দাসত্বের শৃঙ্খল ছিড়ে দূরে নিক্ষেপ করা।

তাওহীদের পথ অবলম্বন করারও দু’টি পন্থা আছে এবং এর ফলাফলও ভিন্ন ভিন্ন। একটি পন্থা হলো, কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে কিন্তু চারদিকের পরিবেশ তার সহযোগী হবে না। সে যদি সরল মনে এ পথ অবলম্বন করে থাকে তাহলে মনের দিক দিয়ে শান্তি লাভ করবে। সে প্রবৃত্তির এমন প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যান করবে যা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। সে পরিবার, গোত্র, সরকার, ধর্মীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের এমন কোন দাবীও গ্রহণ করবে না যা আল্লাহর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এর ফলে সে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হতে পারে; কিন্তু তার মন এ ব্যাপারে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত থাকবে যে, আমি আল্লাহর দাসত্বের দাবী পূরণ করছি। আমি যাদের বান্দা নই আমার কাছে তাদের এমন কোন অধিকার নেই, যে কারণে আমি আমার রবের নির্দেশের বিরুদ্ধে তাদের দাসত্ব করব। দুনিয়ার কোন শক্তিই তার থেকে মনের এ প্রশান্তি ছিনিয়ে নিতে পারে না। এমনকি যদি তাকে ফাঁসির মঞ্চেও চড়তে হয়, তাহলেও সে প্রশান্ত মনে ফাঁসিতে ঝুলে যাবে। সে এ কথা ভেবে সামান্য অনুশোচনাও করবে না যে, আমি কেন মিথ্যা প্রভুদের সামনে মাথা নত করে আমার জীবন রক্ষা করলাম না।

দ্বিতীয় পন্থা হলো, গোটা সমাজ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক এবং সেখানে নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্ম, আইনকানুন, রাজনীতি, অর্থনীতি মোটকথা জীবনের প্রতিটি বিভাগের জন্য আকীদা-বিশ্বাস হিসেবে সেসব মূলনীতি মেনে নেয়া হোক এবং কার্যত চালু করা হোক, যা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাব ও রাসূলের মাধ্যমে দিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন যেটিকে গোনাহ বলবে, সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সেগুলোকে উৎখাত করবে। মিম্বার ও মিহরাব থেকে এর বিরুদ্ধেই আওয়াজ উঠবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর দ্বীন যে জিনিসকে কল্যাণ হিসেবে আখ্যায়িত করবে, আইন তাকেই সমর্থন করবে। ব্যবস্থাপনার শক্তি তা লালন করবে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা মন-মগজে সেটিকে বদ্ধমূল করতে চেষ্টা করবে। এভাবেই মানুষ পূর্ণ শান্তি লাভ করবে এবং উন্নতির সমস্ত দরজা তার জন্য খুলে যাবে।

দ্বিতীয় অবস্থাটি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সর্বাবস্থায় তাওহীদকেই আদর্শ হিসেবে মেনে চলতে হবে এবং সবরকম বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুকাবিলা করে আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য এ দ্বিতীয় অবস্থা সৃষ্টি করা। নবী-রাসূলদের চেষ্টা ও সাধনার লক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ঈমান ও আনুগত্য ছিল না, বরং সামাজিক জীবনে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ কায়েম করারও ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন