hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

অধ্যায়- ৪ : আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা ও মহাপরিচালক
আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা :

اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ

আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। (সূরা যুমার- ৬২)

ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ

তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। (সূরা আন‘আম- ১০২)

আল্লাহ হলেন বিজ্ঞ স্রষ্টা :

فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের কেবল অস্তিত্বই দান করেননি; বরং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার সত্তার সাথে সম্পর্কিত আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ ও কাজের পদ্ধতি, স্থায়িত্বের সময়কাল, উত্থান ও ক্রমবিকাশের সীমা এবং অন্যান্য বিষয়াবলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর সেসব কার্যর্কলাপ, উপায়-উপকরণ ও সুযোগসুবিধার বদৌলতে প্রত্যেকটি সত্তা নিজ নিজ কর্মসীমার মধ্যে তথা নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।

اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ

নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা হিজর- ৮৬)

আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন :

وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ؕ سُبْحَانَ اللهِ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

তোমার প্রতিপালক যা ইচছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, তাতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং মহান; আর তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)

আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সুন্দর :

اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ

যিনি সবকিছুকে অতি সুন্দররূপে সৃজন করেছেন। (সূরা সাজদা- ৭)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্মাণ কৌশলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি জিনিসকে তিনিই আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণ ও বিশেষত্ব দান করেছেন। দুনিয়ায় কাজ করার জন্য হাতের যে গঠনাকৃতির প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দিয়েছেন। পায়ের জন্য যে সর্বাধিক উপযুক্ত গঠনাকৃতির প্রয়োজন, তাও দিয়েছেন। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, বাতাস, পানি, আলো, প্রত্যেককে তিনি এমন বিশেষ আকৃতি দান করেছেন- যা এ বিশ্বজাহানে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি প্রতিটি জিনিসকে কেবল তার বিশেষ আকৃতি দান করেই ছেড়ে দেননি; বরং তিনি সবাইকে পথও দেখিয়েছেন। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যাকে তিনি নিজের গঠনাকৃতিকে কাজে লাগানোর এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পদ্ধতি শেখাননি। কানকে শোনা ও চোখকে দেখা তিনিই শিখিয়েছেন। মাছকে সাঁতার কাটার এবং পাখিকে উড়ার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। গাছকে ফুল ও ফল দেয়ার ও মাটিকে উদ্ভিদ উৎপাদন করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। মোটকথা তিনি কেবল সারা বিশ্বজাহান এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের স্রষ্টাই নন; বরং তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকও।

আল্লাহ সুন্দরভাবে আকৃতি গঠন করেন :

هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَ رْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ

তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ

তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে অতি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন; আর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)

আল্লাহ সবকিছু পরিমাণ অনুযায়ী সৃষ্টি করেন :

اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)

আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন খুঁত নেই :

مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ

দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। অতএব তুমি চক্ষু ফিরিয়ে দেখো, (তাঁর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? (সূরা মুলক- ৩)

ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ اِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّهُوَ حَسِيْرٌ

অতঃপর তুমি (প্রতিটি সৃষ্টির দিকে) দু’বার করে দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক- ৪)

আল্লাহ প্রতিটি জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :

وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ

আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)

سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَ رْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ

তিনি পবিত্র, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যা জানে না তাদের প্রত্যেককেই জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)

আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন :

يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)

তিনি পৃথিবীর কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ

আর আমি আসমান, জমিন ও এ উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)

সকল সৃষ্টিই একেকটি নিয়মে চলছে :

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّۚ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اَ لَا هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ

তিনি যথাযথভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রেখো, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা যুমার- ৫)

আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :

قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَ رْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো যে, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টিকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আনকাবূত- ২০)

اَوَلَمْ يَنْظُرُوْا فِيْ مَلَكُوْتِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ

তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৫)

আল্লাহর অনেক সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষ জানে না :

وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)

এ বিশাল আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন :

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ

সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। এরপরও কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)

তিনি আকাশ ও জমিনকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন :

اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ طِبَاقًا

তিনি সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে। (সূরা মুলক- ৩)

اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌؕ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا

আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীও। এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যেন তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)

আল্লাহ আকাশকে সুসজ্জিত করেছেন :

اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِزِيْنَةِنِ الْكَوَاكِبِ

নিশ্চয় আমি পৃথিবীর আকাশকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্রমালার সৌন্দর্য দিয়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ৬)

وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِيْنَ

আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং সেটাকে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। (সূরা হিজর- ১৬)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশকে, যা আমরা কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পাই। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে বিশ্বকে দেখি এবং যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ।

আল্লাহ এ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন :

وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ

আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ৭)

اَلَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِۚ اَلرَّحْمٰنُ فَاسْاَلْ بِهٖ خَبِيْرًا

তিনি আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা ফুরক্বান- ৫৯)

আল্লাহ সৃষ্টির কাজে ক্লান্ত হন না :

وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ

আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। আর (এসব সৃষ্টিতে) কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ- ৩৮)

তিনি রাত-দিন ও চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন :

وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ

আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)

আল্লাহ বিভিন্ন আকৃতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন :

وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)

আল্লাহ জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন :

وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ

আর তিনি জিন (জাতি) কে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)

আল্লাহ মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন :

لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ

আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন- ৪)

ব্যাখ্যা : কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার এবং রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমনসব অদ্ভুত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় তার মধ্যে এমনসব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ সেই একই কাঠামো এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। মানুষ সৃষ্টির এ মহৎ পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজের জন্মের উপরই চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্থির হয়। তাকে সৃষ্টি করা, সুন্দর আকৃতি প্রদান করা, মাতৃগর্ভে ধারণ করা, জন্মদান করা, লালন-পালন করা এবং জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিনের চলাফেরা সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয়।

মানুষের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ قَضٰۤى اَجَلًاؕ وَاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنْدَهٗ ثُمَّ اَنْتُمْ تَمْتَرُوْنَ

তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর একটি কাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং আরো একটি নির্ধারিত কাল আছে যা তিনিই জ্ঞাত, তারপরও তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আন‘আম- ২)

মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছেন :

وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًاؕ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا

তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক (এসব বিষয়ে) সর্বশক্তিমান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৪)

ব্যাখ্যা : তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে দুনিয়াতে তাদের মাঝে ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন। একদিকে তাদের থেকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে, যারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে, যারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে বংশ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছে।

প্রশান্তির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا

তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)

ব্যাখ্যা : স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে, তিনি মানুষকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রত্যেকে একে অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর, প্রবৃত্তি এবং উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। সেই স্রষ্টা এ উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে আসছেন। কোন এলাকায় কেবল পুত্রসন্তানই অথবা কেবল কন্যাসন্তানই জন্মলাভ করছে এমন কথা শোনা যায় না। এটা এমন জিনিস, যার মধ্যে কোন মানুষের সামান্যতম হস্তÿÿপের অবকাশও নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভে এ ব্যবস্থা সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। আবার বহু ইলাহের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও হতে পারে না।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন :

وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)

ব্যাখ্যা : স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পুরুষ ও নারীর মধ্যে পরস্পরের এমন চাহিদা সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। শান্তির আশায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করা এটা কেবল একজন জ্ঞানীর প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ, যা তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর রহমত অর্থ হচ্ছে এমন আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে একে অপরের কল্যাণকামী ও সুখ-দুঃখে সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে যে ভালোবাসা লাভ করেছে এগুলো কোন সাধারণ বস্তু নয়। এগুলোকে পরিমাপ করা অসম্ভব। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা স্বেচ্ছায় একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।

আল্লাহ বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন :

يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَ رْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ

তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। অবশেষে তা তাঁর নিকট পৌঁছাবে এমন একদিনে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। (সূরা সাজদা- ৫)

আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান :

يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ

তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। (সূরা ফাতির- ১৩)

قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ

বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)

ব্যাখ্যা : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃঙ্খল পরিবর্তনের কারণে রাত-দিনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক ও সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট নৈপূণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন-রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেন। এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র একজন। তিনি খেলাচ্ছলে এ বিশ্বের কোনকিছুই সৃষ্টি করেননি বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করছেন। অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন-রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধীনস্থ দাস মাত্র।

আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত ও মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন :

يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ

তিনি জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন। তিনিই জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর পুনরায়) বের করে আনা হবে। (সূরা রূম- ১৯)

আল্লাহ দুর্বলকে সবল করেন, সবলকে দুর্বল করেন :

اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةًؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ

আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)

আল্লাহ হাসান এবং কাঁদান :

وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى

আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। (সূরা নাজম- ৪৩)

আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান :

وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا

আর তিনিই মারেন ও তিনিই বাঁচান। (সূরা নাজম- ৪৪)

তিনিই সম্পদ দান করেন :

وَاَنَّهٗ هُوَ اَغْنٰى وَاَقْنٰى

আর তিনিই অভাবমুক্ত ও পরিতুষ্ট করেন। (সূরা নাজম- ৪৮)

আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তন করেন :

وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَهُمْ وَاَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ

তারা যেমন প্রথমবার তাতে ঈমান আনেনি, তাই আমিও তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেব। (সূরা আন‘আম- ১১০)

আল্লাহ ঘুম দেন ও জাগ্রত করেন :

وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّىۚ ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে পুনর্জাগরণ করেন, যেন নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা (দুনিয়াতে) যা করেছিলে, সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের সৃষ্টির প্রতি বড়ই করুণাশীল। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর তাকে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়, যাতে সে আবার কয়েক ঘণ্টা কাজ করার শক্তি পায়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা এ উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিদ্রার এমন চাহিদা ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা জাগরণের পর কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রাম ত্যাগ করে। এটি জন্মগতভাবে মানুষের প্রকৃতিতে রেখে দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ বিদ্যুৎ চমকান :

هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ

তিনিই তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করান বিজলী। (অতঃপর এর মাধ্যমে) ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ। (সূরা রা‘দ- ১২)

আল্লাহ আকাশ থেকে বজ্রপাত করেন :

وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيْبُ بِهَا مَنْ يَّشَآءُ وَهُمْ يُجَادِلُوْنَ فِى اللهِۚ وَهُوَ شَدِيْدُ الْمِحَالِ

তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। (সূরা রা‘দ ১৩)

আল্লাহ বৃষ্টি তৈরি করেন :

اَللهُ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهٗ فِى السَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهٗ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِه ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ

আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর বাতাস মেঘরাশিকে সঞ্চালন করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আকাশে পরিব্যাপ্তি করে দেন এবং কখনো তা খন্ড-বিখন্ড করে দেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন (সঞ্চালন করার) ইচ্ছা করেন, তখন তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। (ফলে) তারা আনন্দ করতে থাকে। (সূরা রূম- ৪৮)

আল্লাহ মৃত জমিনকে জীবিত করেন :

اِعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ

জেনে রেখো, আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। আমি তো কেবল নিদর্শনগুলো তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (সূরা হাদীদ- ১৭)

وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ

আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং এর দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। অবশ্যই যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল- ৬৫)

আল্লাহ বিশ্বের ভারসাম্য ঠিক রাখেন :

اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا

নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যেন তা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) সরে না যায়। যদি এরা সরে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)

আল্লাহ সর্বদা কর্মতৎপর :

يَسْاَلُهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَاْنٍ

আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। (সূরা আর রহমান- ২৯)

ব্যাখ্যা : মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন। কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন আবার কাউকে নিমজ্জিত করছেন। সকল সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন