hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৫১
অধ্যায়- ২ : আলিমগণের দায়িত্ব
দ্বীন বুঝা ও তা প্রচার করা আলিমগণের দায়িত্ব :

فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ

তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করত। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসত তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করত, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা- ১২২)

ব্যাখ্যা : প্রত্যেক গ্রাম অথবা গোত্র থেকে কয়েকজন করে লোক বের হতে হবে। তারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে জ্ঞান আহরণ করবে। অতঃপর তারা নিজেদের জাতি ও জনবসতির কাছে ফিরে যাবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বীনী চেতনা ও জাগরণ সৃষ্টিতে তৎপর হবে। এ আয়াতে যে শিক্ষাব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য হলো, লোকদের মধ্যে দ্বীনের জ্ঞান দেয়া এবং তাদেরকে অমুসলিম সুলভ জীবনধারা থেকে রক্ষা করা, খারাপ পরিণামের জন্য সতর্ক করা।

দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে দ্বীন প্রচার করতে হবে :

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌؕ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)

ব্যাখ্যা : এ আয়াতে আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সবধরনের ধারণা, কল্পনা ও কুসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ঈমানদারদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রাসূল ﷺ প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয়সমূহ মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধারণা ও অনুমানের পরিবর্তে জ্ঞানের অনুসরণ করবে- ইসলামী সমাজে এ ধারাটি ব্যাপকভাবে নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যায়, শিক্ষাব্যবস্থায় তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের পেছনে চলার কারণে মানুষের জীবনে যে অসংখ্য ভ্রান্ত মত সৃষ্টি হয়, তা থেকে চিন্তা ও কর্মকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে কুধারণা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অনুমান করে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার, মারধর বা জেলে আটক রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মতভেদের মিমাংসা করতে হবে :

فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا

যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট উপস্থাপন করো; যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। আর এটাই উত্তম পন্থা ও পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা- ৫৯)

মতভেদ মীমাংসা করার জন্য আল্লাহ কিতাব দিয়েছেন :

وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যারা মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। আর এটি (অবতীর্ণ করেছি) মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমতস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৬৪)

কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্তের উপর নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার কারো নেই :

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا

কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনকিছুর নির্দেশ দেন, তখন সে বিষয়ে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তবে সে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়। (সূরা আহ্যাব- ৩৬)

কোন হালালকে হারাম করা যাবে না :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ

হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন, সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)

ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দু’টি কথা বলা হয়েছে-

(এক) তোমরা নিজেরাই কোন জিনিস হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করার অধিকারী হয়ে বসো না। আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম।

(দুই) খ্রিস্টান সন্যাসী, হিন্দু যোগী, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভন্ডদের মতো বৈরাগ্যতা, সংসার বিমুখতা ও দুনিয়ার বৈধ স্বাদ পরিহার করার পদ্ধতি অবলম্বন করো না। ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এ প্রবণতা দেখা গেছে যে, শরীর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করাকে তারা আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্তরায় মনে করে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় তিন ব্যক্তির একটি দল রাসূল ﷺ এর স্ত্রীদের কাছে তাঁর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আসেন। অতঃপর তাদেরকে নবী ﷺ এর ইবাদাত সম্পর্কে খবর দেয়া হলে তারা নবী ﷺ এর ইবাদাতের তুলনায় নিজেদের আমলের পরিমাণ খুব কম মনে করল এবং বলল, আমরা নবী ﷺ এর সমকক্ষ হব কী করে? যাঁর আগের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি আজীবন রাতভর নামায পড়তে থাকব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছর রোযা রাখব, কখনো বিরতি দেব না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমি সর্বদা নারী বিবর্জিত থাকব, কখনো বিয়ে করব না। অতঃপর রাসূল ﷺ তাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা কি সেসব ব্যক্তি যারা এমন এমন কথা বলেছ? তিনি আরো বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি অনুগত এবং তাঁকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। তা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি আবার বিরতিও দেই। রাত্রে নিদ্রাও যাই এবং মহিলাদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩)

অনেকের ইলিম থাকলেও তারা সত্যকে গ্রহণ করে না :

اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْ ۢبَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ

তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়েছে, যারা আল্লাহর কালাম শুনত। অতঃপর তারা তা বুঝার পরও বিকৃত করে ফেলত। (সূরা বাক্বারা- ৭৫)

ব্যাখ্যা : ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদিনার নওমুসলিমরা ইয়াহুদিদের মুখ থেকে শুনেছিলেন যে, দুনিয়ায় আরো একজন নবী আসবেন। যারা তাঁকে সহযোগিতা করবে সারা দুনিয়ায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম গ্রহণের পর তারা আশা করছিল, যারা আগে থেকে নবী ও আসমানী কিতাবের অনুসারী তারা নিশ্চয় এ পথে অগ্রগামী হবে এবং তাদের আহবানে সাড়া দেবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে মদিনার নওমুসলিমরা তাদের ইয়াহুদি প্রতিবেশীদের কাছে যেত এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিত। অতঃপর তারা এ দাওয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে মুনাফিক ও ইসলাম বিরোধিরা এ সুযোগ গ্রহণ করত। তারা এ থেকে এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করত যে, ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক ও সংশয়পূর্ণ মনে হচ্ছে, নতুবা মুহাম্মাদ ﷺ যদি সত্যিই নবী হতেন তাহলে আহলে কিতাবদের উলামা, মাশায়েখ ও বুযর্গগণ কি জেনে-বুঝে ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানাত এবং তারা কি অনর্থক এভাবে নিজেদের পরকাল নষ্ট করত? তাই সরলপ্রাণ মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তোমরা বেশি কিছু আশা করো না। আল্লাহর যেসব আয়াত শুনে তোমাদের দিল কেঁপে ওঠে, সেগুলোকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে করতে তাদের কয়েক প্রজন্ম কেটে গেছে। তারা আল্লাহর সত্য দ্বীনকে নিজেদের ইচ্ছা ও চাহিদানুযায়ী বিকৃত করেছে। এ বিকৃত দ্বীনের মাধ্যমেই তারা পরকালীন নাজাত লাভের প্রত্যাশা করে। সত্যের আওয়াজ শুনার সাথে সাথে তারা সেটা গ্রহণ করবে না।

দ্বীনী ইলিম দ্বারা দুনিয়া অর্জনকারীর পরিণাম :

فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْاَدْنٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَاۚ وَاِنْ يَّأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهٗ يَأْخُذُوْهُؕ اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِؕ وَالدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

অতঃপর অযোগ্য উত্তরাধিকারীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হলো এবং (আল্লাহর) কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো। তারা এ তুচ্ছ দুনিয়ার সম্পদ করায়ত্ত করত এবং (মূর্খের মতো) বলত, আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যদি (পরবর্তীতে আবারও অর্জিত সম্পদের) অনুরূপ সম্পদ তাদের নিকট আসত, তবে তারা তাও হস্তগত করে নিত। তাদের নিকট থেকে কি কিতাবের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বলবে না? আর তারা তো সে কিতাব (বহু বার) অধ্যয়ন করেছে। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পরকালীন ঘরবাড়ীই হচ্ছে উত্তম নিবাস; তবুও কি তোমরা (এ বিষয়ে) অনুধাবন করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)

ব্যাখ্যা : তারা জানে, এ কাজটি করা গোনাহ; তবুও তারা এ আশায় কাজটি করে যে, কোনভাবে তাদের গোনাহ ÿমা করে দেয়া হবে। কারণ তারা মনে করে, তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং তারা যত কঠিন অপরাধই করুক না কেন তাদের ক্ষমা লাভ অপরিহার্য। এ ভুল ধারণার ফলে কোন গোনাহ করার পর তারা লজ্জিত হয় না এবং তাওবাও করে না। বরং এ একই ধরনের গোনাহ করার সুযোগ এলে তারা আবার তাতে জড়িয়ে পড়ে। অথচ তারা এমন একটি কিতাবের উত্তরাধিকারী ছিল, যা তাদেরকে দুনিয়ার নেতৃত্বের পদে আসীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হীনমন্যতার ফলে তারা এর সাহায্যে তুচ্ছ পার্থিব সম্পদ আহরণ করার চেয়ে বড় কোন জিনিস অর্জনের ইচ্ছাই করল না। তারা দুনিয়ায় ন্যায়-ইনসাফ, সত্য ও সততার পতাকাবাহী এবং কল্যাণ ও সুকৃতির অগ্রপথিক ও পথপ্রদর্শক হওয়ার পরিবর্তে নিছক দুনিয়াদার হয়েই রইল।

দুনিয়াপূজারী এক আলিমের কাহিনী :

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ

তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা বর্জন করে। অতঃপর শয়তান তার পেছনে লাগে এবং সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৫)

দুনিয়ায় লোভী হওয়াতে তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে :

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُۚ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِؕ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ

আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়, যাদের উপর বোঝা চাপালেও হাঁপাতে থাকে এবং না চাপালেও হাঁপায়। সুতরাং যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি এ ঘটনা বর্ণনা করে যাও, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৬)

ব্যাখ্যা : এখানে যে ব্যক্তির উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, সে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী ছিল। তার উচিত ছিল, ভুল কর্মনীতি থেকে দূরে থাকা এবং সঠিক কর্মনীতি অবলম্বন করা। কিন্তু সে কেবল পার্থিব স্বার্থ ও আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁঁকে পড়ে। প্রবৃত্তির লালসার মুকাবিলা করার পরিবর্তে সে এর সামনে নতজানু হয়ে পড়ে। তার বিবেক যেসব সীমানা রক্ষণাবেক্ষণের দাবী জানিয়ে আসছিল সে সেগুলো লঙ্ঘন করেছিল। তারপর যখন সে নিজের নৈতিক দুর্বলতার কারণে জেনে-বুঝে সত্যকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলল, তখন ওঁৎ পেতে থাকা শয়তান তার পেছনে লেগে গেল এবং অনবরত তাকে এক অধঃপতন থেকে আরেক অধঃপতনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল। এরপর আল্লাহ এ ব্যক্তির অবস্থাকে এমন একটি কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন, যার জিভ সবসময় ঝুলে থাকে এবং এ ঝুলন্ত জিভ থেকে অনবরত লালা ঝরতে থাকে। যেভাবে আমরা পার্থিব লালসায় অন্ধ ব্যক্তিকে দুনিয়ার কুকুর বলে থাকি, ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়টিকে এখানে উপমা হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কুকুরের স্বভাব হলো, চলাফেরার পথে তার নাক সবসময় মাটি শুঁকতে থাকে, হয়তো কোথাও কোন খাবারের গন্ধ পাওয়া যাবে এ আশায়। তার গায়ে কেউ পাথর ছুঁড়ে মারলেও তার মনে সন্দেহ জাগবে যে, যে জিনিসটি দিয়ে তাকে মারা হয়েছে সেটি হয়তো কোন হাড় বা রুটির টুকরো হবে। পেট পূজারি কুকুর দৌড়ে গিয়ে সেই নিক্ষিপ্ত পাথরটিও কামড়ে ধরে। সে তার পেটের দৃষ্টি দিয়ে সারা দুনিয়াকে দেখে। কোথাও যদি কোন বড় লাশ পড়ে থাকে, তবে সেটি কয়েকটি কুকুরের পেট ভরার জন্য যথেষ্ট হলেও একটি কুকুর তার মধ্য থেকে কেবলমাত্র তার নিজের অংশটি নিয়েই ক্ষান্ত হয় না বরং সম্পূর্ণ লাশটিকে নিজের জন্য আগলে রাখার চেষ্টা করে এবং অন্য কাউকে তার ধারে কাছেও আসতে দেয় না। এ পেটের লালসার পর যদি দ্বিতীয় কোন বস্তু তার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে যৌন লালসা। সারা শরীরের মধ্যে কেবলমাত্র লজ্জাস্থানটিই তার কাছে আকর্ষণীয়। ফলে সে সেটিরই ঘ্রাণ নিতে থাকে এবং সেটিকেই চাটতে থাকে। কাজেই এখানে এ উপমা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথাটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যে, দুনিয়াদার ব্যক্তি যখন জ্ঞান ও ঈমানের বাঁধন ছিড়ে ফেলে প্রবৃত্তির লালসার কাছে আত্মসমর্পন করে চলতে থাকে, তখন তার অবস্থা পেট ও যৌনাঙ্গ পূজারি কুকুরের মতো হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন