hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৭
অধ্যায়- ১২ : আল্লাহর নিদর্শনাবলি
কা‘বাঘর আল্লাহর একটি নিদর্শন :

اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ - فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا

নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬, ৯৭)

রাত ও দিন আল্লাহর নিদর্শন :

اَلَمْ يَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ। তাতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল- ৮৬)

দিন ও রাতের আবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :

اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ

নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)

ব্যাখ্যা : রাত ও দিনের এ ভিন্নতার মধ্যেও এ নিদর্শন রয়েছে যে, দু’টিই পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটার পর একটা আগমন করে। আবার এদিক দিয়েও নিদর্শন যে, একটি আলো অপরটি অন্ধকার। তাছাড়া এর নিদর্শন হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিন ক্রমান্বয়ে ছোট এবং রাত বড় হতে থাকে এবং এক সময় দু’টিই এক সমান হয়ে যায়। তারপর আবার ক্রমান্বয়ে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। তারপর এক সময় দিন ও রাত আবার সমান হয়ে যায়। রাত ও দিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে ভিন্নতা দেখা যায়, তাতে বিরাট উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে। এ উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, সূর্য, পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছুকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আবু যোহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন মুশরিকরা আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, আল্লাহ কি কেবল একজন? যদি তোমার কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর পক্ষে প্রমাণ পেশ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১৩৮)

চাঁদের পরিভ্রমণ ও হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিদর্শন :

وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ - لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ

আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন, ৩৯-৪০)

ব্যাখ্যা : চাঁদের পরিবর্তন মাসের মধ্যে প্রতিদিন হতে থাকে। প্রথম দিন সে ছোট আকারে উদিত হয়, যাকে আরবি ভাষায় هِلَالٌ (হিলাল) বা নতুন চাঁদ বলা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ দিনের রাতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হিলাল আকারে ফিরে আসে। হাজার হাজার বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে এবং কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।

আকাশে বিচরণকারী পাখি আল্লাহর নিদর্শন :

اَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِيْ جَوِّ السَّمَآءِؕ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا اللهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

তারা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখির প্রতি লক্ষ্য করে না? সেগুলোকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই স্থির রাখেন না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৭৯)

বিস্তৃত জমিন, পাহাড় ও নদ-নদী আল্লাহর নিদর্শন :

وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَ رْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًاؕ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং এতে পর্বতমালা ও নদীসমূহও সৃষ্টি করেছেন। আর (এতে) প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৩)

বাতাসের গতির পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :

وَمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ اٰيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ

আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ করার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা জাসিয়া- ৫)

ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে ঋতুর পরিবর্তন সংঘটিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি বিশাল বায়ু স্তর আছে। তাতে এমনসব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রাণীকুলের শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজন এবং নানা প্রকার আসমানী বিপদাপদ থেকে বাঁচার কারণ। এর সাথে এটাও দেখার বিষয় যে, এ বাতাস শুধু বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান নয়, মাঝে মধ্যে তা বিভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কখনো মৃদুভাবে, কখনো শুষ্কভাবে, কখনো আর্দ্রভাবে, কখনো বৃষ্টিবাহী হিসেবে এবং কখনো ঝড়ো হাওয়ার আকারে প্রবাহিত হয়। এসব বাতাস নিজ থেকেই প্রবাহিত হয় না এবং এলোমেলোভাবেও প্রবাহিত হয় না। এরও একটা শৃঙ্খলা আছে, যা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ব্যবস্থা পূর্ণমাত্রায় যুক্তিনির্ভর এবং এর দ্বারা অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যাবলি পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা অনুসারে শীত ও গ্রীষ্মের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তার সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টি বণ্টনের সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সবগুলো জিনিসই ডেকে ডেকে বলছে, কোন অন্ধ প্রকৃতি আকষ্মিকভাবে এর ব্যবস্থা করে দেয়নি। কিংবা সূর্য ও পৃথিবী, বাতাস ও পানি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা কোন ব্যবস্থাপক নেই। বরং নিশ্চিতভাবে একমাত্র আল্লাহই এসবের স্রষ্টা এবং এক বিরাট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর জ্ঞান ও কৌশল এ ব্যবস্থা করেছে। তাঁর অসীম ক্ষমতাবলেই এ ব্যবস্থা পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।

সমুদ্রে জাহাজ চলাচল আল্লাহর নিদর্শন :

وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান। আর যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)

নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন আল্লাহর নিদর্শন :

وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ

আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে (এক সময় একটি) ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর আমি তাদের জন্য এরূপ (নৌযান) সৃষ্টি করেছি, যেন তারা আরোহণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪১, ৪২)

সমুদ্রে চলমান জাহাজ আল্লাহর নিদর্শন :

وَمِنْ اٰيَاتِهِ الْجَوَارِ فِى الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ

তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো সমুদ্রে চলমান পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ। (সূরা শূরা- ৩২)

ব্যাখ্যা : পৃথিবীর তিনচতুর্থাংশ পানি এবং একচতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোট বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবীর এসব স্থলভাগে মানব বসতি বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না, যদি পানি ও বাতাসকে এমন নিয়মের অধীন না করা হতো, যার কারণে নৌ-পরিবহন সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন, যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনানুসারে সৃষ্টি করেছেন?

বৃষ্টি তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :

اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِيْ سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهٗ ثُمَّ يَجْعَلُهٗ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖۚ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ ۢبَرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَيَصْرِفُهٗ عَنْ مَّنْ يَّشَآءُؕ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, তারপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তা হতে নির্গত হয় বারিধারা। (আরো দেখতে পাও যে) তিনি আকাশের শিলাস্তর হতে শিলা বর্ষণ করেন এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক (চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া) মনে হয় তা যেন দৃষ্টিশক্তি কেঁড়ে নেবে। (সূরা নূর- ৪৩)

মৃত জমিনকে জীবিতকরণ আল্লাহর নিদর্শন : গুলো

وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ

আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৫)

উদ্ভিদ ও বাগান আল্লাহর নিদর্শন :

اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الْاَ رْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ

তারা কি জমিনের দিকে লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি! নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা- ৭, ৮)

وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَ رْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ

আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)

ব্যাখ্যা : মানুষ দিন-রাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল আহার করছে। তারা গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, এ ভূমির আবরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল বন-বনানী সৃষ্টি এবং নদ-নদীর স্রোত প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয়, যা নিজে নিজেই চলছে। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যে, এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এ নিষ্প্রাণ জমিনের বুক চিরে উদ্ভিদগুলোর জীবন লাভ করা সম্ভব হলো কেমন করে? কয়েকটি বড় বড় উপকরণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আর তা হলো :

১. পৃথিবীর উপরিভাগে এমন উপাদানের পর্দা বিছানো আছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।

২. জমিনের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চুষে নিতে সক্ষম হয়।

৩. শূন্য আকাশে বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বৃষ্টি বহনের কাজ করে। এর মধ্যে এমনসব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে, যা উদ্ভিদের জীবন ও তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

৪. সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে উদ্ভিদের জীবন গঠনে প্রয়োজনানুসারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করতে পারে।

এ চারটি বড় বড় উপকরণ সৃষ্টি করার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হয়। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি ও বাতাস পায় তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ জন্ম নেয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ তার নিজ প্রজাতির চারা জন্ম দেয়। এসব উদ্ভিদ অসংখ্য শ্রেণির পশু ও মানবকুলের খাদ্য, ঔষধ, পোষাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূরণ করে। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে, সে যদি হঠকারী ও সংকীর্ণ না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে যে, এ সবকিছু আপনা-আপনি হতে পারে না; মহান আল্লাহই এসব পরিচালনা করছেন।

বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল আল্লাহর নিদর্শন :

وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍؕ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ

পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, এসব একই পানিতে সিঞ্চিত। আর আমি খাদ্য হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভূখন্ড বানিয়ে রেখে দেননি। পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি, যোগ্যতা এবং উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ এসব দিক থেকে বিভিন্ন ভূখন্ড পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ভূখন্ডের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে নানা প্রকার ভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমাণ কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যান্য সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে যদি দেখা যায় তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে, মানুষের বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা এবং পৃথিবীর এসব ভূখন্ডের বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় এবং এসবের বদৌলতে মানবসমাজ সম্প্রসারিত হওয়ার যে সুযোগ লাভ করে তা নিশ্চিতভাবেই কোন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় সত্তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ সংকল্পের ফলশ্রুতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্বজাহানের সব স্থান একই অবস্থায় রাখেননি। পৃথিবী একই, কিন্তু এর ভূখন্ডের প্রত্যেকটির বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয়। আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক খেজুর গাছ বের হয়। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকটিই একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য দেখে অস্থির হবে না। বরং সে বলতে বাধ্য যে, এসব আল্লাহ তা‘আলারই নিদর্শন।

জমিনে ছড়িয়ে থাকা প্রাণীকুল আল্লাহর নিদর্শন :

وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ ؕ وَهُوَ عَلٰى جَمْعِهِمْ اِذَا يَشَآءُ قَدِيْرٌ

তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাদেরকে সমবেত করতে সক্ষম। (সূরা শূরা- ২৯)

ব্যাখ্যা : আমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল প্রাণীকুল এবং শূন্যে উড়ে চলা পাখিদের কোন একটি শ্রেণির জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যায়, কীভাবে তাদেরকে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তাদের আকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। কীভাবে তাদের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি ও সামর্থ্যের সঞ্চার করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জীবিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তার সীমানা পেরিয়ে এগিয়েও যেতে পারে না, পিছিয়েও আসতে পারে না। কীভাবে তাদের এক একটি প্রাণীকে এবং এক একটি ছোট ছোট কীটপতঙ্গকেও তার নিজের স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। কীভাবে একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের থেকে কাজ আদায় করে নেয়া হচ্ছে। কীভাবে তাদেরকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার আওতাধীন করে রাখা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বংশ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা যথানিয়মে চলছে। আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য থেকে যদি কেবল একটি নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর গুণাবলির যে ধারণা কুরআন আমাদের সামনে পেশ করেছে তা যথার্থ ও প্রকৃত সত্য। কিন্তু আমরা নিজেদের চোখ মেলে এগুলো দেখি না এবং বুঝারও চেষ্টা করি না।

পশুর ভেতরে সুস্বাদু দুধ তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :

وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً ؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ

অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)

ব্যাখ্যা : পশু যে খাদ্য খায় তা থেকে একদিকে রক্ত তৈরি হয় এবং অন্যদিকে তৈরি হয় মলমূত্র। কিন্তু এ পশুদের স্ত্রীজাতির মধ্যে আবার একই খাদ্য থেকে তৃতীয় একটি জিনিস তৈরি হয়, যাকে আমরা দুধ বলি। বর্ণ, গন্ধ, গুণ, উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে আগের দু’টি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর বিশেষ করে গবাদি পশুর মধ্যে এর উৎপাদন এত বেশি হয় যে, তারা নিজেদের সন্তানদের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর মানুষের জন্যও এ উৎকৃষ্টতম খাদ্য বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। এটা আল্লাহর কুদরতের এক নিদর্শন মাত্র।

চতুষ্পদ জন্তুর বিভিন্ন উপকারিতা আল্লাহর নিদর্শন :

وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ - وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ

তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তোমরা তা হতে আহার কর এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ২১, ২২)

ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মেষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এদেরকে এমন নকশা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের উপর আরোহণ করে, এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে এবং এদের দুধ দোহন করে পান করে। আবার তা দিয়ে মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টিও তৈরি করে। এদের গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এদের লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

মৌমাছি কর্তৃক মধু তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :

وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)

ব্যাখ্যা : মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও রয়েছে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পঁচন থেকে সংরক্ষণ রাখে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে। ‘রবের তৈরি করা পথ’ বলতে মৌমাছির দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দলগঠন প্রক্রিয়া, শ্রমবণ্টন প্রক্রিয়া, শ্রমনীতি এবং সংগ্রহনীতি- এসব হচ্ছে সেই পথ, যা তাদের রব তাদেরকে শিখিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটি নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নিয়মে এ অগণিত মৌমাছিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে। এটা আল্লাহর একত্ববাদের বিশেষ নিদর্শন।

বান্দাদের মধ্যে রিযিকের তারতম্য আল্লাহর নিদর্শন :

اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিযিক দেন এবং তা হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঐসব লোকদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা রূম- ৩৭)

অতীত জাতির ধ্বংসের কাহিনীতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :

وَكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشًا فَنَقَّبُوْا فِى الْبِلَادِ هَلْ مِنْ مَّحِيْصٍ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ

আমি তাদের পূর্বে আরো বহু জাতি ধ্বংস করেছি, যারা ছিল তাদের অপেক্ষা শক্তিতে অনেক প্রবল। তারা দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াত; কিন্তু তবুও (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোন পলায়নের জায়গা ছিল কি? নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অন্তঃকরণ আছে অথবা যে একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে। (সূরা ক্বাফ- ৩৬, ৩৭)

মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন :

وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَاَلْوَانِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ

আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২২)

ব্যাখ্যা : যদিও প্রতিটি মানুষের মুখ ও জিহবার গঠন এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতি একই ধরনের, তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন রকম। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতিও আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টির উপাদান এবং গঠনসূত্র এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়াও দুনিয়ায় সকল দিকেই এত বেশি বৈচিত্র দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তুর যে কোন একটি শ্রেণিকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটির মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য ভিন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে এমন একজন দক্ষ কারিগর কাজ করছেন, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে কোন নমুনা ছাড়াই তৈরি করেন। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সর্বদা একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে নিশ্চিত বুঝতে পারবে যে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের উপর তিনি দৃষ্টিবান।

গোটা পৃথিবী আল্লাহর নিদর্শন :

وَفِى الْاَ رْضِ اٰيَاتٌ لِّلْمُوْقِنِيْنَ

পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা যারিয়াত- ২০)

ব্যাখ্যা : পৃথিবীর অস্তিত্ব, তার গঠন ও আকার-আকৃতি, সূর্য থেকে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব, তার উপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা, সেখানে বিভিন্ন ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার উপর বাতাস ও পানি সরবরাহ, তার অভ্যন্তরে অগণিত সম্পদের ভান্ডার সরবরাহ, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন রকমের অগণিত উদ্ভিদ উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্বদানের পূর্বে সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো অগণিত নিদর্শনাদি আছে, যা দেখে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহাশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি।

মানুষের গোটা দেহ আল্লাহর নিদর্শন :

فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ - خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ - يَخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ

সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাঁড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারেক, ৫-৭)

وَفِۤيْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ

আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও! তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা যারিয়াত- ২১)

ব্যাখ্যা : বাইরে দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই মানুষ অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কীভাবে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকারে সেই নিভৃত কোণে কীভাবে লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে তা বড় করা হয়েছে। কীভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও দেহ এবং কর্মশক্তিসম্পন্ন শক্তি দেয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে এ বিশাল জগতে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র মানুষের জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য হজম করা, রক্ত তৈরি করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা এবং ক্লান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত নিজ থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য মানুষের চেষ্টা ও সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয় হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে- যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞানবুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাঙ্খা, অনুভূতি, আবেগ, প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে, যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সবরকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে, যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের উপর তাদেরকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়।

মানুষকে একটি সত্তা বানিয়ে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই সে তার লালন-পালন, প্রবৃত্তি, উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকম সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে সে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে, তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ পৃথিবীতে মৃত্যু পর্যন্ত কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের উপর যুলুম চালিয়েছে। মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন, তাঁর বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই উচিত নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মতো একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন